গোপালগঞ্জে জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় ৭ হাজার একর জমির চাষাবাদ ঝুঁকিতে

বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় ইতোমধ্যে তিনটি সেতু-কালভার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আরো একটি কালভার্ট বন্ধ করে বাড়ি-ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এটি বন্ধ হলে ২ বিলের ৭ হাজার একর জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এতে বিল দুটিতে চাষাবাদ ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এমন অবস্থা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরী গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের দুটি বিলের। সেতু-কালভার্ট রক্ষায় উত্তরপাড়া গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে রোববার (১১ মে) সকালে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে একটি পিছঢালা সড়ক মেরী গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের দিকে চলে গেছে। গ্রামের ঢোকার মুখে এ সড়কের প্রথম মোড়ে একটি বক্স কালভার্ট রয়েছে। এ কালভার্টের মাধ্যমে বিলের নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয়। কালভার্টের দক্ষিণপাশে মাটি ফেলে একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে। তারও দক্ষিণে জমির মালিক শহিদ মিয়া বালু দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছেন। এতে কালভার্ট দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কালভার্টের কোলঘেঁষে বালু ফেলে তিনি ভরাট করবেন। এখানে শহিদ বাড়িঘর করবেন। তার পাশের জমির মালিক লিয়াকত খান বাঁশ দিয়ে জমি ঘিরেছেন। এখন বালু ফেলে জমি ভরাট করবেন। তিনিও সেখানে বাড়িঘর নির্মাণের আয়োজন করছেন। এছাড়া অনেক আগে ওই সড়কের রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের ব্রিজ কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, নিম্ন জলাভূমি বা বিলবেষ্টিত গ্রাম উত্তরপাড়া। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের জন্য ১৯৮৪ সালে এ গ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করে সরকার। সড়কের উত্তর পাশে উত্তরপাড়া-ধলগ্রাম বিল। এ বিলে সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলি জমি। আর সড়কের দক্ষিণ পাশে উত্তরপাড়া-কাজীপাড়া বিল। এ বিলেও সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। বিল দুটিতে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করা হয়। তাই বর্ষার পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের সাথে খাল ও নালায় প্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে দেয় সরকার। বিলের জমিতে সারাবছর ধান, পাট, সরিষা, তিল, মসুর, খেসারী সহ বিভিন্ন ফসল ফলে। এ ফসল দিয়ে গ্রামের ৮০ ভাগ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।
ওই গ্রামের কৃষক শাহ আলম মোল্লা বলেন, সড়ক নির্মাণের আগে গ্রামের বাড়িগুলো বিলের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তখন বর্ষায় নৌকায় ও শুকনা মৌসুমে হেঁটে বাড়ি যেতে হত। প্রত্যেক পরিবারে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন খাল বিলে নৌকা চলে না। তাই সড়কের পাশে অনেকে ব্রিজ-কালভার্ট বন্ধ করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। ব্রিজ-কালভার্ট সব বন্ধ হয়ে গেলে দুই বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এতে চাষাবাদ বন্ধের ঝুঁকি রয়েছে। বিলে ফসল না হলে আমাদের জীবন জীবিকা স্থবির হয়ে পড়বে।
উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক কেরামত আলী সরদার বলেন, বাড়িঘর করে আগে তিনটি ব্রিজ কালভার্ট বন্ধ করা হয়েছে। এখন আরো একটি কালভার্ট বন্ধ করা হচ্ছে। এতে দুটি বিলে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এতে জমির চাষাবাদ ব্যাহত হবে। ফসল উৎপাদন কমে যাবে। সুতরাং কৃষির স্বার্থে সেতু-কালভার্টগুলো রক্ষা করা দরকার।

কালভার্টের মুখে মাটি ফেলার কথা স্বীকার করে শহিদ মিয়া বলেন, এ রাস্তায় রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের ব্রিজ-কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে অনেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে বাড়িঘর নির্মাণ করব। কালভার্ট আমাদের জমির পাশে পড়েছে।
পাশের জমির মালিক লিয়াকত খাঁ বলেন, আমি গরীব মানুষ। আমার ভাগে সামান্য একটু পৈতৃক জায়গা পড়েছে। আমার আর কোন জমি জায়গা নেই। তাই ওই জমিতে আমি বালু ভরাট করে বাড়িঘর করার জন্য বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসান এনটিভিকে বলেন, শুক্রবার (৯ মে) গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের পরিদর্শন টিম যাবে। পরিদর্শন টিমের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।