একই লাইনে ফের দুই ট্রেন, রক্ষা পেল হাজার যাত্রী

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেয়েছে যাত্রীবাহী দুটি ট্রেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। তবে ড্রাইভারের বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রাণে রক্ষা পায় উভয় ট্রেনের প্রায় এক হাজার যাত্রী।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার একরামুল হক ও পয়েন্টম্যান রওশন আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছিল। দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঘটনার পর পরই তাৎক্ষণিকভাবে আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঈশ্বরদীগামী সিক্স ডাউন উত্তরা মেইল ট্রেনটি আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি একই লাইনে চলে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটির আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রমের জন্য দুই নম্বর লাইন ক্লিয়ার থাকার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে দুই নম্বরের পরিবর্তে এক নম্বর লাইন ক্লিয়ার ছিল। ফলে এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের মুখোমুখি হয় আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি।
সূত্র জানায়, কপোতাক্ষ ট্রেনের চালক রুহুল আমিন সিরাজ এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটি দেখতে পেয়ে মুখোমুখি হওয়ার ১৫ গজ দূরে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এতে দুটি ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পায়। পরে আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি পেছন দিকে ব্যাক করে ঘটনার ৩০ মিনিট পর দুই নম্বর লাইন দিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়ানীর স্টেশন মাস্টার একরামুল হক বলেন, ‘পয়েন্টম্যানের ভুলের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য আধাঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে স্বাভাবিক নিয়মে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।’
আড়ানী স্টেশনের পয়েন্টম্যান রওশন আলী বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে স্ট্রোক করে প্রতিবন্ধীর মতো হয়ে পড়েছি। দ্রুত চলাচল করতে সমস্যা হয়। আমি পয়েন্টস ঠিক করতে যাওয়ার আগেই আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেন আড়ানী স্টেশনে ঢুকে পড়ে। তবে চালক তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মুখোমুখি হওয়ার আগে ট্রেনটি থামিয়ে দেন।’
কপোতাক্ষ ট্রেনের চালক রুহুল আমিন সিরাজ বলেন, ‘আড়ানী স্টেশনে আন্তনগর কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। নিয়ম অনুযায়ি ট্রেন চলছিল। আড়ানী রেল স্টেশনের পূর্ব দিকের পয়েন্ট পার হওয়ার পর দেখি যে এক নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। সেই লাইনে আরেকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রেনটির মুখোমুখি হওয়ার আগেই কৌশলে জরুরি ব্রেক করে ট্রেনটি থামিয়ে দেই।’
উত্তরা ট্রেনের চালক রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘যে লাইনে আমার ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, সেই লাইন দিয়ে আরেকটি ট্রেন আসা দেখে যাত্রীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে। তবে আল্লাহ পাক সবাইকে হেফাজত করেছেন।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি ট্রেনের একাধিক বগি আরেকটি ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়।
এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর দুপুরে ঢাকা থেকে রংপুরগামী 'রংপুর এক্সপ্রেস' ট্রেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিনসহ সামনের তিনটি বগিতে আগুন ধরে যায়। উল্লাপাড়া স্টেশনে পয়েন্টিং সিগন্যালের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে চালকসহ ১০ জন আহত হন।