ঝিনাইদহে ট্রাকের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ১১

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারের পিরোজপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে চালকসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে নয়জন পুরুষ, এক নারী ও এক শিশু রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা সুন্দরপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান কল্লোল (২৫), একই উপজেলার বাটপাড়া গ্রামের সোনাতন দাস (২৪), জেলার শৈলকুপার উপজেলার বগুড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ (৭৫), কোটচাঁদপুরের হরিন্দিয়া গ্রামের হারুন অর রশিদ সোহাগ (২৫), চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার আব্দুর রশিদের মেয়ে রেশমা খাতুন (২৩), চুয়াডাঙ্গা সদরের নাথকুণ্ডু গ্রামের ইউনুচ আলী (২৮), একই উপজেলার নাগদা গ্রামের অলিউল আলম শুভ (২৫), মাগুরার বাসচালক উজ্জ্বল হোসেন (৩৮)। নিহত সাত বছরের শিশু ও আরো দুজনের নাম জানা যায়নি।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলাম জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা জে কে পরিবহণের বাসটি ঘটনাস্থলে আসার পরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। এ সময় অপর আরেকটি ট্রাক বাসটিকে ধাক্কা মারে। এতে বাসটি সড়কের উপর উল্টে দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আরো জানান, খবর পেয়ে কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের ভেতর থেকে প্রথমে ৯টি লাশ উদ্ধার করে। এরপর আহতদের পাঠানো হয় যশোর মেডিকেল ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। যশোর যাওয়ার পথে বারবাজার গরিব শাহ ক্লিনিকে মারা যান আরো একজন।
ঘটনার পরে সড়কটি দিয়ে সব ধরনের যানবাহণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টার দিকে যশোর পুলিশ লাইন্স থেকে র্যাকার এনে বাসটি উদ্ধার করা হয়। এ উদ্ধার কাজ চলার সময় মহাসড়কটিতে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার সময় তারা কাছাকাছি বারবাজার বাজারের একটি রাজনৈতিক সভায় ছিলেন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারসহ নেতাকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উদ্ধার কাজে অংশ নেন তারা। সেইসঙ্গে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়াসহ পুলিশ সদস্যরা যোগ দেন উদ্ধার কাজে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সূর্বণা রানী সাহা জানান, সন্ধ্যা ৬টা থেকে যানবাহণ চলাচল শুরু হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন উপজেলার তৃলোচনপুর গ্রামের তানজিন শিরিন জানান, বাসটিতে কমপক্ষে ২২ জন মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে যশোর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, আহতের সংখ্যা ১৫ জনের বেশি। ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন নয়জন। পরে আরো আরো দুজন হাসপাতালে মারা যান। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ জনে। এর মধ্যে নয়জন পুরুষ এবং একজন নারী ও একজন শিশু রয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে স্বজনদের কাছে তাদের মরদেহ হস্থান্তর করা হয়। এখনো তিনজনের মরদেহ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কুড়ি হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।