ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়ি

পাবনার সুজানগর উপজেলার খ্যাতিমান জমিদার আজিম চৌধুরীর ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বাড়িটি দেখতে এখন আর পর্যটকরা ভিড় করে না। এমনকি চৌধুরী বাড়ির সেই নামের আর খ্যাতিও নেই।
আনুমানিক আড়াইশ বছর আগে পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে জমিদার আজিম চৌধুরী। যখন এ দেশে একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা ছিল স্বপ্ন দেখার মতো, সে সময় জমিদার আজিম চৌধুরী দুলাইর মতো নিভৃত পল্লিতে নির্মাণ করেন দোতালা একাধিক দৃষ্টিনন্দন এবং বিলাসবহুল ভবন।
দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান জানান, ১২০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ওই বাড়িটি ছিল দেশি-বিদেশি গাছপালায় আবৃত্ত। আর অত্যাধুনিক ডিজাইনের ওই বাড়িতে ছিল ১১টি নিরাপত্তা গেট। বাড়িতে প্রবেশের প্রথম গেটে দুটি আধুনিক কামান রাখার পাশাপাশি দুটি বিশাল আকৃতির হাতি রাখা হতো। হাতি দুটি জমিদার বাড়ির নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও জমিদার আজিম চৌধুরীর ভ্রমণের কাজে ব্যবহার হতো। সেইসঙ্গে জমিদার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির চারদিকে খনন করা হয়েছিল বিশাল নিরাপত্তা দীঘি। এ ছাড়া বাড়ির অভ্যন্তরে জমিদার পরিবারের গোসলের জন্য খনন করা হয়েছিল একটি পুকুর। জমিদার দরবারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোসলের জন্য বাড়ির বাইরে খনন করা হয়েছিল আরেকটি বিশাল পুকুর। বাড়ির পাশেই নামাজ আদায়ের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
দুলাই ডা. জহুরুল কামাল সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শহীদুর রহমান বলেন, ‘জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়িটি ছিল যেন পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ এই দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে ভিড় করতেন। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়িটিতে শিক্ষা সফরেও আসত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। জমিদার আজিম চৌধুরী মারা যাওয়ায় বাড়িটি আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে এক সময়ের মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িটি এখন শুধুই স্মৃতি।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রওশন আলী বলেন, ‘বাড়িটি জমিদার পরিবারের সদস্যদের দখলে রয়েছে। সে কারণে সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়।’
জমিদার আজিম চৌধুরীর নাতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আহসান চৌধুরী বলেন, ‘বাড়িটি পরিবারের একাধিক সদস্যর মালিকানায় থাকায় ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।’