ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে শুক্রবার রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদ ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণের (যাঁরা অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন) প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার কমছে। এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ।’
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে, যা গোটা বিশ্বে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণার ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নিমার্ণাধীন পদ্মাসেতু এ বছরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাল্লাহ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আমাদের অর্জন প্রশংসনীয়।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ সুবিধাসহ উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী।’ রাষ্ট্রপতি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারসহ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে উল্লেখ করে আব্দুল হামিদ বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বরং বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন মহামৃত্যুঞ্জয়ী। মৃত্যু তাঁকে নিঃশেষ করেনি, বরং বাঙালির চিত্তাকাশে আরও উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে। তাই, নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে, আজ তারা যে পথটি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তাঁর দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক, মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।’