পাবনায় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণ কমেছে

পাবনায় দিন দিন মাছ চাষ বাড়লেও কমছে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আহরণ। দুই দশক আগেও জেলার মৎস্যভাণ্ডারে চলনবিলসহ শতকরা ৮৬ ভাগ মাছ আহরণ হতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এবং ১৪ ভাগ মাছ চাষ হতো পুকুর জলাশয়ে। এখন দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। বর্তমানে এ জেলার নয়টি উপজেলায় শতকরা ৮৫ ভাগ মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে পুকুর, জলাশয়, নয়নজলি ও অন্যান্য স্থানে। মাত্র ১৫ ভাগ মাছ আসে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নদী ও বিল থেকে। ফলে, কমে গেছে মাছের স্বাদ ও গন্ধ। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ রোববার থেকে পাবনায় শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ।
পাবনা জেলা মৎস্য অফিসসূত্রে জানা যায়, পদ্মা, যমুনা, বড়াল, গুমানি, চিকনাই, করোতোয়া নদী ও চলনবিল বেষ্টিত পাবনায় ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জনের বসবাস। এদের মাছের চাহিদা ৫১ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে মৎস উৎপাদন হয়েছে ৬৯ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন, যা চাহিদার তুলনায় ১৭ হাজার ৮৩২ মেট্রিকটন বেশি।
২০২২-২০২৩ সালে মৎস চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ৭১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
সূত্র আরও জানায়, পাবনা জেলায় ১০ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৩৯ হাজার ১০২টি পুকুর রয়েছে। বাণিজ্যিক খামারের ২৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে পুকুর রয়েছে দুই হাজার ১১০টি। ১০৬টি খাল, ২১২টি বিল, ১১টি নদী আছে। এ ছাড়া ৭৬২টি ধান ক্ষেতে মাছ চাষ হয়। চাষ হয় প্লাবন ভূমি, বুরোপিঠ, খাঁচায়ও। জেলায় সরকারি হ্যাচারি আছে তিনটি।
এ ছাড়া, এ জেলায় ইলিশ আহরণ হয় ২৩০ মেট্রিক টন। আর মৎস্য অভয়আশ্রম আছে ৩১টি।
পাবনার চরসর্দিরাজপুরের জেলে সতিশ হালদার বলেন, ‘মানুষ পুকুরে মাছ চাষ করে ব্যবসা করে। নদীতে মাছ জোটে কম। আমাদের আর বাঁচার পথ নেই। এখন দিনে নৌকা চালাই, আর রাতে মাছ ধরার চেষ্টা করি।’
বেড়া উপজেলার নাগদহ গ্রামের জেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র বলেন, ‘এখন যমুনায় মাছ একদম কমে গেছে। আমরা এখন দিনমজুরি করি।’
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নদী ও বিল থেকে প্রাকৃতিক মাছ আহরণ এখন মাত্র ১৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৮৬ শতাংশ। এখন পুকুর ও অন্যান্য উৎস থেকে উৎপাদন হচ্ছে শতকরা ৮৫ শতাংশ, যা ২০ বছর আগে ছিল ১৪ শতাংশ।’ তিনি বলেন, ‘সরকার প্রাকৃতিক মৎস্য আহরণে কাজ করছে।’
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘পুকুর জলাশয়ের যেসব স্থানে মাছ উৎপাদন হয়। সেসব স্থানে মাছের খাবারের মান বাড়াতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক উৎসে মাছের বংশ বৃদ্ধিতে সবাইকে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুকুরের মাছের খাদ্যে কোনো প্রকার অসাধুতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’