পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, রোগীসহ ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ‘পাবনা মানসিক হাসপাতালে’র চিকিৎসক, নার্স, রোগীসহ অন্তত ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেলায় নতুন ২৩০ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের অন্তত ২০ রোগী, তিনজন চিকিৎসক ও সাতজন নার্স জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হন। র্যাপিড টেস্টের রেজাল্টে তাদের পজিটিভ এসেছে। তাদের কয়েকদিন আইসোলেশনে রেখে ১২ জনকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে হাসপাতালের অন্য একটি ওয়ার্ডে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
পরিচালক জানান, চলতি মাসের প্রথমে চিকিৎসক, নার্সসহ বেশ কয়েকজন ভর্তিকৃত রোগীর করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে তাদের হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাকি রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় করোনায় আক্রান্ত ১২ রোগীকে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডা. মাসুদ রানা সরকার বলেন, কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ না থাকলে নতুন কোনো রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে না। তাই আপাতত রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না।
ডা. মাসুদ রানা জানান, করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত ১৩ জুলাই নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হলে ১২ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। রোগীর পাশাপাশি হাসপাতালে তিনিসহ তিনজন চিকিৎসক ও সাতজন নার্সও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন অবনতি হলেও একটি পিসিআর মেশিন পায়নি পাবনাবাসী। অবশেষে নমুনা পরীক্ষায় চরম ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। পাবনা মেডিকেল কলেজ ভবনে ল্যাব নির্মাণের ৯৫ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কিট এলেই চালু করা যাবে ল্যাবটি। বিষয়টি জানিয়েছেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স।
আজ রোববার দুপুর ২টায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনে পিসিআর মেশিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
পাবনাবাসীকে সুসংবাদ দিয়ে গোলাম ফারুক প্রিন্স জানান, জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি পিসিআর ল্যাব মেশিন স্থাপনের। ইতোমধ্যে সেটি আমরা নিয়ে আসছি, এর কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ, কিট ও টেকনিশিয়ান এলেই চালু হবে করোনা পরীক্ষার ল্যাব। সব শ্রেণি-পেশার মানুষই এখানে টেস্ট করাতে পারবেন। দুর্ভোগ পোহাতে হবে না সাধারণ মানুষদেরও।
সংসদ সদস্য বলেন, শুধু লকডাউন দিয়েই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত সচেতনতাই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সারা বিশ্ব আজ এক ক্রান্তিকাল সময় অতিক্রম করছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিকনির্দেশনায় দেশে এখনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শুধু জনগণের মধ্যে একটু বাড়তি সতর্কতা এলেই আমরা সুস্থ থাকতে পারব। সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হাট-বাজার বা রাস্তাঘাটে চলাচল করার আহ্বান জানান তিনি।
পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বুলবুল হাসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের এখানে একটি আরটি পিসিআর ল্যাব দিয়েছে। সেটি আমাদের কলেজ ভবনে স্থাপন করেছি। সব কাজই প্রায় শেষ। অল্প একটু কাজ বাকি আছে। সেটি হলেই আমাদের এখানে পিসিআর ল্যাব চালু হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পাবনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাফিকুল হাসান জুয়েল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদী হাসান রুমী, ডা. আহমদ তাউস, ডা. শাহিন ফেরদৌস শানু, ডা. বিপ্লব কুমার সাহা, ডা. রুহুল কুদ্দুস, ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স, ডা. হাবিবুল্লাহ, ডা. শারমিন সবনম, পৌর আওয়ামী লীগের নেতা কামরুজ্জামান রকি, পাবনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজ নয়ন প্রমুখ।