ফের সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা উজানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। দুর্ভোগ ও দুর্গতি চরম আকার ধারণ করেছে নিম্ন আয়ের বানভাসী মানুষের জীবনে।
পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে সিলেটের বুক চিড়ে বহমান বড় দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নগর ও শহরতলীর নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টিপাত ও স্থানে স্থানে জমে থাকা পানির কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বন্যার পানিতে অনেক স্থানে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের সদর উপজেলা, সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকজন অতিকষ্টে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে গবাদিপশু নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েছে হাওর অঞ্চলের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।

অন্যদিকে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় আশার বাণী শুনিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট। তবে সিলেটে বন্যার পানি কমলেও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পানি নাও সরতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সিলেটের সীমান্ত অঞ্চল কানাইঘাট ও উজানে ভারতের মেঘালয়ে প্রবল বর্ষণের কারণে সুরমা নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অবশ্য এ চার-পাঁচ দিন পানি কমতে থাকবে। তবে ১৯, ২০, ২১ ও ২২ জুলাই সিলেটে ভারি বর্ষণে আবারও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।’
সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই মাসে ১২ দিনে সিলেটে ৪৮৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ৮১৯ মিলিমিটার। মাসের বাকি সময়জুড়ে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) শাম্মা লাবিনা অর্ণবের দেওয়া তথ্য মতে, সিলেট জেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৩৭টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এ যাবত ২১৫ মেট্রিকটন চাল, পাঁচ লাখ টাকা ও ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেল থেকে ওই এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারার পানি আটটি পয়েন্টের পাঁচটিতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সারি পিয়াইন ও ধলাই নদীতে ঢলের পানি কিছুটা কমেছে, আর বন্যার পানি বেড়েছে হাওর ও নিম্নাঞ্চলে।