বেপরোয়া হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ, নীরব কেন্দ্রীয় নেতারা

পদ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। পদ বাণিজ্যসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত বছরের ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়। এর পরেও থামছে না তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। বাণিজ্যসহ সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে আর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক বছরের জন্য সাইদুর রহমানকে সভাপতি ও মহিবুর রহমান মাহিকে সাধারণ সম্পাদক করে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। কমিটি অনুমোদনের কিছুদিন পরেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন সাইদুর রহমান ও মহিবুর রহমান মাহি।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জাপ্পি নামের স্থানীয় ছাত্রলীগের এক কর্মীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সাইদুর ও মাহি। এরপর জহিরুল ইসলাম রুপম নামের আরও একজনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেন মাহি নিজেই। পদ বাণিজ্যের এ অভিযোগে উঠলে গত ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
মাহতাবুর আলম জাপ্পি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে যে অভিযোগটি পাঠিয়েছেন সেটি এনটিভি অনলাইনের হাতে রয়েছে। অভিযোগটি করা হয়েছে, গত ২৭ জুলাই। অভিযোগে তিনি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে বলেছেন, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য জেলা সভাপতিকে ১১ লাখ টাকা আর সাধারণ সম্পাদককে ৯ লাখ টাকা দেন। এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে লেনদেন হয়েছে।
গরু চুরির মামলা
এর আগে ২০১০ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় গরু চুরির মামলা হয় মাহির বিরুদ্ধে। মামলা নম্বর ৭, তারিখ ৯/৩/২০২০। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনেও মাহির নাম ছিল।
গরু চুরির মামলার বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি এনটিভি অনলাইন বলেন, ‘গরু চুরির ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভুল করে আমার নাম দিয়েছিলেন, পরে আদালত আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন।’
পত্রিকা অফিসে হামলা
এ ছাড়া গত ১৯ এপ্রিল হবিগঞ্জের স্থানীয় একটি পত্রিকার অফিসে মাহির নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদকের বাসভবনেও হামলা করেন মাহি। এ ছাড়া মাহির বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ইয়াবা ইস্যু
২০২০ সালে ২৫ আগস্ট ৩০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় মাহির অন্যতম সহযোগী বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান। এ ঘটনায় মাহমুদ হোসেন খানকে ছাত্রলীগ থেকে শৃঙ্গলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া মাহির সঙ্গে কারো মতপার্থক্য হলেই ইয়াবা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়ে থাকেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি। এমন একাধিক ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
মন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচির্পূণ মন্তব্য
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি। এজন্য তাঁকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’