মোংলায় সোয়া দুই লাখ মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ১০৩টি
সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলার প্রায় সোয়া দুই লাখের বেশি মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১০৩টি। যাতে ধারণ ক্ষমতা ৬৮ হাজার মানুষের। বন্দর ও পৌর শহরের তুলনায় অধিক দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার চাঁদপাই, চিলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন। কারণ সুন্দরবন ও বন্দরের পশুর নদীর পাড়ে এ ইউনিয়নগুলো হওয়াতে বিভিন্ন সময় দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে এলাকাগুলো। তবে, সতর্ক সংকেত তিন নম্বর জারি হলেই উপকূলীয় এ এলাকায় ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়া দুর্যোগের প্রস্তুতি স্বরূপ আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেল ৩টায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, মোংলায় মোট ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোর সবই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার। তারমধ্যে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে রয়েছে ৮৪টি আর পৌরসভায় রয়েছে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। এখানকার দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫১ জনের মোট জনসংখ্যার বিপরীতে ১০৩টি আশ্রয় কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৬৮হাজার মানুষের। বাকী লোকজনকে আশ্রয় নিতে নিজেদের ও আশপাশের ব্যক্তিদের পাকা বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থার বহুতল ভবনে।
জানা গেছে, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি। এ কয়টিতে দুর্যোগের সময় আশ্রয় নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষ। তবে, ঝড়-জ্বলোচ্ছাসে পৌর শহরে লোকজনের আশ্রয় নিতে তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না। কারণ শহরে দ্বিতলবিশিষ্ট পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত, সরকারি-বেসরকারি ভবন রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সেসব ভবনে আশ্রয় নিতে পারবেন শহরের বাসিন্দারা। তবে, সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় উপজেলার দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে পশুর নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ও জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে বেশি। উপজেলার চাঁদপাই, চিলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পশুর নদীর পাড়ে অবস্থিত। পশুর নদী ঘেষা চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর-কাইনমারী থেকে চিলা ইউনিয়নের জয়মনিরঘোল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় ২২ হাজার মানুষের বাস। তারমধ্যে চিলা ইউনিয়নের কানাইনগর ও দক্ষিণ কাইনমারী বেশি দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ। আর চিলা ইউনিয়নের চিলা বাজার, আমতলা, কলাতলা, সিন্দুরতলা ও জয়মনিরঘোল বেশি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বাজুয়া খেয়াঘাট, শেলাবুনিয়া, বিদ্যারবাহণ ও বুড়িরডাঙ্গা বাজার এলাকা পশুর ও মোংলা নদীর পাড় ঘেঁষে হওয়ায় দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নটি।
চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৩০ হাজার। আর ৩০ হাজার মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১১টি। তাতে আশ্রয় নিতে পারবেন সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মানুষ। বাকিদের আশ্রয় নিতে হবে আশপাশের পাকা বহুতল ভবন, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাগুলোতে।’
চিলা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন বলেন, ‘৫০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে আমার ইউনিয়নে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি। ইউনিয়নের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো- ৫, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড, যা পশুর নদীর পাড়ে অবস্থিত।’
সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইমরাম ইজারদার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৩২ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র। তাতে ১০ থেকে ১১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এই ইউনিয়নে সুন্দরবন লাগোয়া ৩, ৪ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো জনবসতি এলাকা থেকে দুই বা তিন কিলোমিটার দূরে ফাকাঁ জায়গায়। তাই ওই এলাকার মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে কষ্ট ভোগ করতে হয়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, ‘মোংলাতে যে পরিমাণ আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে তা জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে ঝড় দীর্ঘস্থায়ী হলে এখানে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের থাকারও সমস্যা হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেকটি আশ্রয় কেন্দ্র স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার, তাই সেখানে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ নানা সামগ্রীও থাকে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-পুরুষের গাদাগাদি অবস্থানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই দুর্যোগের সময় অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়গুলো মাথার রাখতে হবে।’
পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. রহমান বলেন, ‘পৌরসভায় জনসংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার। আর পৌরসভায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি, যাতে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষের। তবে, শহরে অনেক বহুতল ভবন থাকায় পৌর এলাকার লোকজনকে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, ‘নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়াতে ইতোমধ্যে এ উপজেলায় সিপিপির ৬৬টি ইউনিটের প্রায় ১৪০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আগেভাগে সরিয়ে আনা হবে। দুর্গতদের জন্য খাবার মজুদ করা হয়েছে। এছাড়া নিম্নচাপের কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগের প্রস্তুতি স্বরূপ আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেল ৩টায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এরপর সতর্ক সংকেত যখন তিন নম্বর দেওয়া হবে তখন লোকজনকে সতর্ক করার পাশাপাশি জানমাল রক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্রমুখী করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’