মৌলভীবাজারে কমেছে করোনা শনাক্তের হার, টিকা পেতে দীর্ঘ লাইন

সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলায় করোনা শনাক্তের হার কমে এসেছে। বেড়েছে টিকা গ্রহণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ।
আজ সোমবারও প্রতিদিনের মতো ভোর থেকে হাসপাতালের সামনে ছিল টিকাপ্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের দৈনিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে ১০১ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষায় পাঠালে ১০ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১২ সেপ্টেম্বর শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ১১ সেপ্টেম্বর ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, ১০ সেপ্টেম্বর ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও কমে এসেছে।
করোনার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে রাজনগরে চার, কুলাউড়ায় দুই, বড়লেখায় পাঁচ, কমলগঞ্জে পাঁচ, শ্রীমঙ্গলে ১১, জুড়ীতে পাঁচ এবং সদর হাসপাতালের ৪০ জন রয়েছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফয়ছল জামান জানান, গত দুই সপ্তাহে সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
এদিকে এখন প্রতিদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণ করছে মানুষ। আবার অনেকে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছে বাড়ি। আজ তীব্র রোদেও ছিল টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। অসহনীয় গরমে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পায়নি প্রায় ৫০০ মানুষ।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা আনোয়ার মিয়া জানান, সকাল ১১ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ান। পরে জানতে পারেন টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। শেষে তিনি টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরেন।
আমেনা বেগম জানান, আগের দিনও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দিতে পারেননি। আজ সকাল ৬টার মধ্যে লাইনে দাঁড়ান এবং দুপুরের দিকে টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
এমদাদ আলী নামে একজন জানান, টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে এলেও মোবাইল ফোনে এসএমএস না পওয়ায় টিকা দিতে পারেননি। তিনি গণটিকার প্রচার জেনে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন, গণটিকার লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি। তিনি আরও জানান, এক মাসের অধিক সময় পার হলেও তার মোবাইল ফোনে টিকা দেওয়ার এসএমএস পাননি।
টিকা নিতে আসা আসমা বেগম জানান, সকাল ৯টায় আমি টিকা দিতে আসি। টিকা নেওয়ার এসএমএস পেয়েই এসেছি আমি ও আমরা সঙ্গের একজনকে নিয়ে। টিকা নেওয়ার জন্য মহিলাদের লাইনে দাঁড়াই। হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে বাইরের শ্রীমঙ্গল সড়ক পর্যন্ত পর্যন্ত লাইন ছিল। এত রোদের মধ্যে আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। তার পরও চিন্তা করলাম টিকাটা দিয়েই যাই।
টিকা নিতে আসা পুরুষদের লাইন আরও দীর্ঘ ছিল। আনুমানিক সাড়ে ১২টায় পুলিশ বাঁশি দিয় বলে টিকা শেষ হয়ে গেছে। এত রোদের মাঝে বাইরে দাঁড় করিয়ে টিকা পাইনি, তা হলে আর টিকাই নিব না।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ‘টিকার ঘাটতি আছে। আমি গতকাল রোববার রাজনগর থেকে এক হাজার টিকা আনিয়েছি। গতকাল ৮০০ এসএমএস গেছে টিকা নিতে আসার জন্য। যারা এসএমএস পেয়েছে তারা টিকা পাওয়ার কথা।’
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘দু-তিন দিনের মধ্যেই টিকা চলে আসবে। সর্বশেষ চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির ৮৫ হাজার ডোজ করোনার টিকা গত ৫ সেপ্টেম্বর এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টিকা রেজিস্ট্রেশনকারী অপেক্ষমাণ রয়েছে। প্রতিদিন জেলার সাতটি কেন্দ্রে প্রায় চার হাজার টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
এসএমএস প্রাপ্তির পর টিকা দিতে আসার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় সাত হাজার ৯৬২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছে ছয় হাজার ৭৩৫ জন। জেলার সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসোলেশনে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছে ২৪ জন।