রাজশাহী কারাগারে ছেলের সামনে মা-বাবার বিয়ে

খালাতো বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন প্রেমিক। একপর্যায়ে অন্তসত্ত্বা হন প্রেমিকা। এরপর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। এ মামলায় ২০১২ সালে আদালত অভিযুক্ত প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
সম্প্রতি উচ্চ আদালতে ওই অভিযুক্ত যুবকের আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন করেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে বলেন, ‘তারা বিয়ে করবেন। আসামিকে জামিন দিলে তাঁর আপত্তি নেই।’ এরপর আদালত কারাফটকে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।’
আদালতের নির্দেশে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ শনিবার দুপুরে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া আট বছরের ছেলেসহ দুই পরিবারের ১৪ জন কারাগারে উপস্থিত ছিলেন।
কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যরা আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নসিমনে চড়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আসেন। এরপর তাদের কারা ফটকে ঢোকানো হয়। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার কৃষ্ণা দেবী ও পুরোহিত পরিমল চক্রবর্তী। কনেপক্ষ আসার পর কারাগার থেকে বরকে আনা হয়। তারপর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিনিয়র জেল সুপার কনেকে একটি নতুন শাড়ি উপহার দেন। দুই পরিবারের সবাইকে তিনি মিষ্টিমুখও করান।
বর তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘বিয়ে করে ভালোই লাগছে। সবাই দোয়া করবেন। যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি।’
কনে বলেন, ‘আমরা চাই যেন বাকি জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারি।’
সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘উচ্চ আদালত এই বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিন দিন আগে আদেশের কপি পাওয়ার পরই দুপক্ষকে ডাকি। সুষ্ঠুভাবে বিয়েও সম্পন্ন হলো। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, ওই প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। এর সূত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে ২০১১ সালে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে লিপ্ত হন। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপর বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সালিশ করার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করেন। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় হাজির হয়ে ওই প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন।
মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন এক রায়ে অভিযুক্ত যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
ভিকটিম যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর। কিন্তু সেই বয়সেই তাঁর কোলে আসে একটি ছেলে সন্তান। মেয়েটির আর পড়াশোনা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা মেয়েটি কৃষিশ্রমিক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তাঁর সন্তান। সন্তানের বয়স এখন আট বছর। এদিকে ওই আসামিরও আট বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এতদিন পর দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়। কনের সম্মতিতেই আদালত তাদের বিয়ের আদেশ দেন।