শিক্ষা সংগ্রামে পাবনার ১১ অন্ধ শিক্ষার্থী

ইচ্ছাশক্তির জোরে মানুষ ছুঁতে পারে তাঁর লালিত স্বপ্নকে। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করা যায় সব প্রতিবন্ধকতা। এমন কিছু উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ১১ জন অন্ধ ছাত্র। তারা নেমেছে আলোকিত হওয়ার শিক্ষাযুদ্ধে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের সাহায্যে জেলা সদরের দোগাছি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার শ্রুতিলেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে তারা। জেলার সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দিচ্ছে। স্বপ্ন দেখছে, লেখাপড়া শিখে কর্মজীবী হওয়ার।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অন্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ বাড়ছে। ২০১৩ সালে পাবনায় মাত্র চারজন অন্ধ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। গত নয় বছরে অন্তত শতাধিক অন্ধ ও প্রতিবন্ধী ছাত্র এসএসসি, এইচএসসি, বিএ এবং এমএ পাশ করেছে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদরে নিলেরপাড়ার মো. রোমান মিয়া, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর মো. মাসুদ রানা, যশোরের মো. হাফিজুর রহমান টুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. মোশারোফ হোসেন, নাটোরের বড়াউ গ্রামের মো. আমিরুল ইসলাম, পাবনার সাঁথিয়ার মো. ছবুর আলী ও মো. শুভোন মোল্লা, সদরের চরতারাপুরের মো. শাকিল প্রামাণিক, দোগাছির আল আমিন, রাজশাহীর বাঘার মো. রবিউল ইসলাম, চাঁদপুরের হাইমচরের মো. শাজাহান আলী জন্ম থেকে অন্ধ। প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অভাব অনটন ও নানা প্রতিকূলতায় এক সময় তাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরিবারই এদের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ সময় মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসাইন খুঁজে খুঁজে এসব অন্ধ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেন।
অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র এসব অন্ধদের পক্ষে শ্রুতি লেখকের সম্মানী তো দূরের কথা, লেখাপড়া করার টাকাই নেই। এরপরেও থেমে থাকেনি এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রুতি লেখকদের শোনান। এবং শ্রুতি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। এ কারণে তাদের জন্য তিন ঘণ্টার অতিরিক্ত মাত্র ২০ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়।
অন্ধ শিক্ষার্থী রোমান মিয়া জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতির কোনো বই সরবরাহ করা হয় না। এ ছাড়া ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তনের কারণে চরম সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। করোনার কারণে পরীক্ষা পেছানোয় তাদের লেখাপড়া ও যাতায়াত চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন বলেন, ‘পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ অন্ধকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এবার ১১ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুইজন ব্রেইল পদ্ধতির শিক্ষক থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের বিশেষায়িত ছাত্রদের শিক্ষা দিতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করলে তারা আর সমাজের বোঝা হবে না। অন্য দশজনের মতো তাঁরা কাজ করে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারবে।’