সরকার আগুন নিয়ে খেলছে : খন্দকার মোশাররফ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/14/bnp-2_0.jpg)
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পাওয়া জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্র করে সরকার আগুন নিয়ে খেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনোক্রমে লেখা সম্ভব হবে না। আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। ইতিহাস যারা লেখবেন সত্যকে মেনে নিয়ে লেখবেন। এ দেশে ২৫ মার্চের আগে স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, স্বায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দালন হয়েছে- কিন্তু জিয়াউর রহমানই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন।’
আজ রোববার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুঁশিয়ারি দেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাব নিয়ে টানাটানি করে আগুন নিয়ে খেলছেন। আপনাদের হাত পুড়ে যাবে, ছাঁই হয়ে যাবে। এই খেতাব কেউ দেয় নাই, এই খেতাব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকে অর্জন করেছেন। এই খেতাবের ওপরে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার কারো নেই।’
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই সরকার তো সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে এ দেশের জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে। তাদের পক্ষে নৈতিক কথা বলা সম্ভব নয়। মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত, মিথ্যা তাদের বলতে হবে, তারা অন্যায়ের ওপরে প্রতিষ্ঠিত, তাদের অন্যায়ই করতে হবে। আজকে বাংলাদেশে সুশাসনের অভাব, বিচারহীনতা, গণতন্ত্র নাই, অর্থনীতিতে লুটপাট, ব্যাংকগুলো লুটপাট হচ্ছে, রিজার্ভ ডাকাতি হচ্ছে, শেয়ারবাজার লুট হচ্ছে। একটি জায়গা দেখাতে পারবেন না, যেখানে তারা কোনো ভালো কাজ করেছে। ন্যায়ের কাজ করেছে, কোনো সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের এই দুর্গন্ধ বাংলাদেশে শুধু নয়, বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’
‘আল জাজিরা একটা রিপোর্ট দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দেওয়া হলো। যদি ওই রিপোর্টের বিষয়বস্তুগুলো মিথ্যা হয় তাহলে সরকারের দায়িত্ব ছিল তার প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা বিষয়বস্তুর মধ্যে যান নাই; শুধু রাজনৈতিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। কারণ তাদের কাছে জবাব নাই। অতত্রব এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নাই’, যোগ করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে সাহসের সঙ্গে চলতে হবে। অনেকে বলেন, সরকার একটার পর একটা আইটেম দেয় আমাদেরকে ব্যস্ত রাখার জন্য। আমাদের কিন্তু এখন ব্যস্ত থাকার দরকার নাই, অনেক আইটেম নিয়ে মাথা ঘামানোরও দরকার নাই। ওই হীরক রাজার দেশের যে একটা স্লোগান- রশি ধরে মার টান, রাজা হবে খান খান। আমাদের ওই জায়গায় থাকতে হবে।’
গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাবটা কিন্তু যুদ্ধের। দেশটা কিন্তু ভাষণে স্বাধীন হয় নাই, যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে। কিসের যুদ্ধ ছিল? গণতন্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। তা আমাদের এই গণতন্ত্র বক্তৃতায় আসবে না, যুদ্ধে আনতে হবে। সেই যুদ্ধটাই আমাদের শুরু করতে হবে। সেই যুদ্ধের ফলাফল হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি তো সাক্ষী আছি। অমিত বিক্রমে জেড ফোর্স যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সবচাইতে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে, সবচাইতে বেশি জেড ফোর্সের সৈনিকেরা জীবন দিয়েছে এ দেশে স্বাধীনতার জন্যে। অথচ তাঁর কমান্ডারের একটি খেতাব যা দেওয়া হয়েছে সেটি এখন ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একাত্তরে স্লোগান ছিল- বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আবারও সময় এসেছে- বীর বাঙালি জেগে উঠ, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করো। জিয়াউর রহমানসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানকে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমি অনুরোধ করব, জিয়াউর রহমানের মতো সেরা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে টানাটানি করে নিজেরা নব্য রাজাকারে পরিণত হবেন না। এই ঝুঁকি নেবেন না আপনারা।’
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের পক্ষে। আমার মতে, জিয়াউর রহমান বীর পুরুষদের একজন, খুনিদের বিপক্ষে। এই খেতাব কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার তুমি কে? তুমি তো যুদ্ধ করো নাই। বুকের রক্ত ঢেলে দিতে যারা রণাঙ্গনে ছিল তারা সেই বীর উত্তম, বীরপ্রতীক, বীরবিক্রম। তুমি কে?’
সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় সভায় বিএনপির আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আালাল, শিরিন সুলতানা, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের মকসুদ আলী মঙ্গোলিয়া, আবদুল খালেক, ফরিদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কালাম ফয়েজী, রায়হান আল মাহমুদ, মাজহারুল ইসলাম, সালেহা আখতার প্রমুখ বক্তব্য দেন।