সাংবাদিক মিজান রহমানের বাড়িতে হামলা, গ্রেপ্তার চার

পূর্বশত্রুতার জের ধরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক মিজান রহমানের গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহীর বাগমারা থানা পুলিশ।
আজ শনিবার বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।’
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মামলার প্রধান আসামি বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের ডোখলপাড়া গ্রামের মো. রুবেল, মনসুর প্রামাণিক, আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু ও আবুল কালাম আজাদ।
ওসি মুস্তাক আহমেদ বলেন, যোগীপাড়া ইউনিয়নের ডোখলপাড়া গ্রামের সাংবাদিক মিজান রহমানের নিজ বসতবাড়িতে গত ৫ ডিসেম্বর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মিজান রহমানের ছোট ভাই আহসান হাবিব বাদী হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মারধর ও মারধরের সময় শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো দু-তিনজনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা বাঁশের লাঠি, লোহার রড, দা, কোড়াল ও কোদাল নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বাদীর ঝাড়ের ১০০টি বাঁশ কেটে ফেলে। এ সময় আসামিরা বাদীকে ও তাঁর পরিবারকে গালমন্দ করে।
বাদীর স্ত্রী আসামিদের গালমন্দ করতে নিষেধ করেন। তখন মামলার নয় নম্বর আসামি আব্দুল মজিদ বাদীর স্ত্রীর ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এরপরই মামলার এক নম্বর আসামি রুবেল লোহার রড নিয়ে বাদীর স্ত্রীর ওপর হামলা চালায় এবং জখম করে।
মারধরের সময় বাদীর স্ত্রী মাটিতে পড়ে গেলে আসামি আবুল কালাম আজাদ তাঁর কাপড় টেনে-হিঁচড়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী আহসান হাবিব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলাটির অন্য আসামিরা অব্যাহতভাবে আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে চলেছে। এবং হামলার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে।’
এ বিষয়ে সাংবাদিক মিজান রহমান বলেন, ‘হামলার সময় আসামিরা বাড়িতে অবস্থান করা আমার পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে। এছাড়া আমার ছোট ভাই আহসান হাবিবকেও মারধর করে। বাড়ির সবজি বাগান তছনছ করে দেয় এবং বাড়ির গেট ভাঙচুর করে। এছাড়া কয়েকটি জমির ফসল নষ্ট করে হামলাকারীরা জোর করে তা দখলের চেষ্টা করে।’
মিজান রহমান আরো বলেন, ‘৪০ বছরের বসতবাড়িতে ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনা রাজশাহীর পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেনকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
বাদীর পরিবারের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, মামলার আসামি আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলুর উসকানিতে বসতবাড়িতে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। এ বিষয়ে ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের হবু মেম্বার নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া ডোখলপাড়া গ্রামের ওমীর আলীর ছেলে সাজু জেহের উদ্দিন, মুকিম প্রামাণিকের ছেলে মঞ্জু প্রমুখ ব্যক্তিরা উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাদীর পরিবার আরো জানায়, ১৯৯০ সালে মিজান রহমানের বাড়িতে ডাকাতি মামলার প্রধান আসামি এই আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু। সেসময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডাকাতরা অন্যান্য জিনিসপত্র না নিয়ে শুধু জমিজমার দলিলের বাক্সটি নিয়ে যায়। এ বিষয়ে তখন বাগমারা থানায় মামলাও হয়েছিল।
আসামিদের ধারণা, জমিজমার যেহেতু দলিল চুরি হয়ে গিয়েছে তাই তারা আগে বিক্রি করা জমি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে চুরি যাওয়া সব দলিলের সার্টিফাইড কপি তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিজান রহমান।