প্রথম দিনই মাঘের তোপ!
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/01/14/photo-1484406787.jpg)
কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে ঠান্ডার তীব্রতা। আজ শনিবার কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন।
পৌষ মাসে তেমন শীত অনুভূত না হলেও মাঘ আসামাত্রই বাড়ছে শীতের প্রকোপ।
উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। বিশেষ করে নদ-নদীতীরবর্তী চর এলাকায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় সেখানকার মানুষজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর ভেলাকোপার বৃদ্ধা বছিরন বেওয়া জানান, ‘বাবা এমন ঠান্ডা জীবনেও দেখি নাই। সন্ধ্যার পর হাত-পা বের করা যায় না। আমরা গরিব মানুষ, কাপড় নাই। খুব কষ্ট করে আছি বাবা। একটা কম্বল দিলে ভালো হয় বাবা।’
ঠান্ডার প্রভাবে বেড়েছে ডায়রিয়া। এ ছাড়া নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগও দেখা দিচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহিনুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে ২১৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার সংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, শীতকাতর মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৩ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা সকাল ৬টায় ৯৮ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশের একাংশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। ওই দুই এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার ওই দুই এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম ছাড়াও আজ টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস উল্লেখ করে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়েও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, বরিশাল বিভাগ এবং ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সীতাকুণ্ড, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নয়, শীতল বাতাস বইছে।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে তখন তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ ডিগ্রির নিচে গেলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ৬ ডিগ্রির নিচে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে উল্লেখ করা হয়। ওই হিসেবে ঢাকায় এখনো শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি।