ডিম দিয়েছে ‘বাটাগুর বাসকা’

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির একটি কচ্ছপ ৩১টি ডিম দিয়েছে। প্রজননকেন্দ্রের পুকুরে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক চারটি কচ্ছপের মধ্যে একটি আজ শনিবার এ ডিমগুলো দেয়।
এই প্রথম সুন্দরবনের প্রজননকেন্দ্রের কোনো কচ্ছপ ডিম দিল। ডিমগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় এ প্রজাতির কচ্ছপের প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের জন্য ২০১৪ সালে করমজলে কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা প্রজনন ও সংরক্ষণে কাজ করছে।
গত বছরের ডিসম্বরে চারটি প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপ সংগ্রহ করে করমজল প্রজননকেন্দ্রের পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর গত তিন মাস সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেন বিশেষজ্ঞরা। ডিসেম্বর থেকেই মাত্র চারটি নারী ও দুটি পুরুষ কচ্ছপ দিয়ে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বাকি তিনটি নারী কচ্ছপও শিগগিরই ডিম দেবে বলে জানিয়েছেন করমজল পর্যটন ও প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির।
এ কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রের পুকুর পাড় থেকে ডিমগুলো সরিয়ে নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটানোর ‘হোলনেসট’-এ রাখা হয়েছে। থার্মোমিটার দিয়ে নিয়মিত ‘হোলনেসট’-এর তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তাপমাত্রা কম-বেশি হলে ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে সাধারণত তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ভালো হয়। ৩৪-৩৫ ডিগ্রির বেশি হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অন্যথায় ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৫৫ থেকে ৬০ দিন লাগবে বলেও জানান তিনি।
প্রজননকেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার আবদুর রব বলেন, শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে পারে। আবার ভ্রূণজনিত সমস্যায় ডিম ও বাচ্চা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। তবে যাতে শতভাগ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, সে জন্য পরিচর্যা করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সফল হলে বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির কচ্ছপের অস্তিত্ব রাখা সম্ভব হবে।
বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণ ও প্রজননের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তারের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুটি কচ্ছপের পিঠের ওপর স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনার আদাচাই এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বন বিভাগ, টারটেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স (আমেরিকা), ভিয়েনা জু (অস্ট্রিয়া) ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও পরিবেশগত ছবি সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করেছে। এ গবেষণার মধ্য দিয়ে এ প্রজাতির কচ্ছপের স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর সেগুলো সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুর রব।