প্রগতিশীল জোটের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বেধড়ক লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন ছাত্রীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একাধিক পুলিশ সদস্যের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধা দেননি এবং কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
urgentPhoto
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ দাবি করেন, সাধারণ ছাত্ররা বহিরাগত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ করেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলার সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, শিক্ষার মান ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ছাত্ররাজনীতি নিশ্চিত করা ও সরকারি তোলারাম কলেজে ছাত্রলীগের ভর্তি-বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানিয়ে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। দাবি আদায়ে নেতাকর্মীরা সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে তাঁদের বাধা দেন এবং ফটক আটকে রাখেন। এ সময় ফটকের সামনেই জোটের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের পাশেই ফটকের সামনে একটি ছোট পিকআপে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। অপরদিকে কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল করছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হঠাৎ কলেজের পেছনে কলাভবনের ফটক দিয়ে ছাত্রলীগের ২০-৩০ জন নেতাকর্মী দৌড়ে লাঠি নিয়ে এসে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ছাত্রছাত্রীদের পেটানো শুরু করেন। কয়েকজন পুলিশের পিকআপের এক কর্নারে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি। লাঠির আঘাতে আহত হয়ে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পান। হামলায় সময় টেলিভিশনের স্টাফ ক্যামেরাপারসনসহ আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরে লাঠিসোটাসহ হরতালবিরোধী স্লোগান দিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন।
এদিকে হামলায় আহত ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কোনো সিটই খালি নেয়। লাঠির আঘাতে চরম যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাঁরা। কয়েকজন তাঁদের জখম হওয়া স্থানে বরফ ও আইসক্রিম দিয়ে যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করছিলেন।
জরুরি বিভাগে উপস্থিত জেলা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আহ্বায়ক মৈত্রী ঘোষ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজকে আমরা তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে স্মারকিলপি দিতে গিয়েছিলাম। কলেজে ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছিল। ছাত্রছাত্রীরা আসবে যাবে। অথচ গেটের সামনে গিয়ে দেখি গেটে তালা। পুলিশের গাড়ি গেট বন্ধ করে দাঁড়ানো। আমরা যাওয়ার পর পুলিশের গাড়ি কিছুটা সরে যায়। পুলিশ আমাদের ঢুকতে দিচ্ছিল না। পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা বলছিলেন, তাঁরা আলাপ করে নিক। তিনি আলাপ করতে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কলেজের ভেতরে শহীদ মিনার থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা চিৎকার করছিলেন। আমরা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা পর অনেক শিক্ষক এসে বললেন, তোমাদের স্মারকলিপি নেওয়া হবে। শিক্ষকরা আমাদের স্লোগান বন্ধ করতে বলেন। আমরা স্লোগান বন্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় তোলারাম কলেজের পেছনের কলাভবনের গেট দিয়ে কাঠ, বাঁশ, লাঠি, ছোরা যা হাতের কাছে পেয়েছে ক্যাম্পাস থেকে এনে আমাদের মিছিলের সাইট থেকে হামলা চালায় এবং সবাইকে বেধড়ক পেটায়। যেখানে আমাদের সামনে পুলিশ গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো। আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, আমাদের বোনদের সেভ (বাঁচান) করুন। তারা (পুলিশ) বলেন, আপনারা এখান থেকে যান। আমরা কী করব।’
এ ব্যাপারে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই, এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। আমরা যারা ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করি, আমরা সবাই ভেতরে ছিলাম। ভেতরে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। আপনারা জানেন, আমাদের কলেজের অধ্যক্ষের আদেশ আছে, এখানে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। যারা বহিরাগত, তারা তো এ রকম মিছিল নিয়ে, বা এ রকম মারামারি, হৈ চৈ করে ভেতরে ঢুকতে পারে না। আর তোলারাম কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সব সময় সেই ভাষা আন্দোলন থেকে সব সময় সোচ্চার। তারা কখনোই এই বহিরাগতদের মেনে নেবে না। আমাদের এখানে কোনো দায়িত্ব ছিল না। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হয়তো তাদের প্রতিরোধ করেছে। ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এখানে আমাদের কোনো কথা নেই।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে আসে। তখন তারা একটু স্লোগান দেয়। আর ছাত্রলীগের পোলাপান হরতালবিরোধী মিছিল করেন। এখানে এই ঘটনা ঘটে।’
হামলার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয় থাকার ব্যাপারে এসআই মোস্তফা কোনো কথা বলতে চাননি।
ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা : প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেল আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ ১৭ জুন বেলা সাড়ে ১১টায় ভর্তি-বাণ্যিজ্যের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রজোট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার সময় ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা এক যৌথ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক এই ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে দোষীদের বিচারের দাবি জানান।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈকত মল্লিক এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘শুধু বিচার দাবি নয়, সবাই মিলে সন্ত্রাসী ও হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল বাপ্পি, কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জাহিদ সুজন, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান রিচার্ড, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক জেরিন সেতু, অর্থ সম্পাদক ফারজানা; সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক সুজন বাড়ৈ, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য ইলিয়াস জামান, সোহেলা আক্তার, মেঘলা আক্তার, রাজু আহমেদ, রিয়া আক্তার, আমিনুল শুভ; সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য খাদিজা আক্তার, শাওনসহ অন্তত ২৩ জন।
হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।