সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠ চুরির হিড়িক!
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/04/05/photo-1491412369.jpg)
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সাঙ্গু সংরক্ষিত সরকারি বনাঞ্চলের (রিজার্ভ ফরেস্ট) গাছ চুরির হিড়িক পড়েছে। জোত পারমিটের (বাগানের গাছ কাটার অনুমতিপত্র) আড়ালে বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপেই এই চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাচার করা হচ্ছে কর্তন নিষিদ্ধ চম্পাফুল কাঠ। প্রকাশ্যে অবৈধভাবে সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের শত বছরের পুরোনো মাদার ট্রি খ্যাত চম্পাফুল ও গর্জনসহ মূল্যবান প্রজাতির গাছও কাটা হচ্ছে।
রিজার্ভ ফরেস্টের চম্পাফুল ও গর্জনসহ মূল্যবান গাছ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে কাঠ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন, লেডা জাহাঙ্গীর আলম ও ইয়াকুব নবীসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
গত সোমবার বন বিভাগ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ছয়টি স’মিল (করাতকল) ও ব্যবসায়ীর নিজস্ব কাঠের ডিপো থেকে প্রায় দুই হাজার ঘনফুট কর্তন নিষিদ্ধ মূল্যবান চম্পাফুল কাঠ জব্দ করেছে।
পাড়ার প্রধান ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ছয় মাস ধরে দফায় দফায় থানচি উপজেলার দুর্গম নারিচঝিরি, পদ্ধঝিরি, আন্ধারমানিক, বড়মদক, ছোটমদক, ইয়াংরিপাড়া, বড় শৈফক্ষ্যং ঝিরি, দুংড়ুংঝিড়ি, লুংচৈঝিড়ি, ইয়াংরের কুম এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে গাছ। অবৈধভাবে সাঙ্গু সংরক্ষিত সরকারি বনাঞ্চলের (রিজার্ভ ফরেস্ট) শত বছরের পুরোনো চম্পাফুল ও গর্জনসহ মূল্যবান বৃক্ষও কাটা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা ঘুরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও বিষয়টি দেখতে পান।
স্থানীয় পাহাড়ি নেতা সংখ্যচিং, উবামং ও রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুইসহ আরো কয়েকজনের সহায়তায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে রিজার্ভ ফরেস্টের মাদারট্রি সাইজের গাছগুলো নির্বিচারে কাটছে কাঠ চোরাকারবারিরা। বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তার যোগসাজশে অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা জোত পারমিটের আড়ালে রিজার্ভ ফরেস্টের গাছগুলো কেটে কাঠের রদ্দা (টুকরা) হিসেবে পাচার করে চলেছে।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের কাঠ পাচার করে কোটিপতি হয়েছেন বান্দরবানের অনেক কাঠ ব্যবসায়ী। মাদারট্রি সাইজের বৃক্ষগুলো কাটার কারণে সরকারি রিজার্ভ ফরেস্ট বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। থানচি, সেকদু ও মিবাক্ষা বন বিভাগের তিনটি রেঞ্জের আওতাধীন আন্ধারমানিক, বড়মদক, ছোটমদক, তীন্দু, থানচি বাসস্ট্যান্ড, ব্রিকফিল্ডের পাশে, পদ্ধঝিরি, বোডিংপাড়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠের রদ্দা মজুদ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাচারের উদ্দেশে তীন্দু থেকে বড়মদক ঝিরি পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক গাছের চালি বেঁধে মজুদ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাঠগুলো বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাড়ার এক নেতা বলেন, সাঙ্গু সংরক্ষিত সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের নারিচ ঝিরিসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ১৫ দিন ধরে ২২ জন শ্রমিক দিয়ে রিজার্ভ ফরেস্টের বড় বড় গাছ কাটা হচ্ছে। সওদাগর জামাল উদ্দিনের মাঝি মোজাফ্ফর শ্রমিকদের তত্ত্বাবধান করছে। রেমাক্রি ইউপির চেয়ারম্যান মুইশৈথুই, পাহাড়ি সংখ্যচিং ও উবামং সহযোগিতা করছে সওদাগরদের।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাঠ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বড়মদক আমার সেগুন কাঠের একটি জোত পারমিট আছে গত বছরের। তবে চম্পাফুল কাঠের ব্যবসা আমি করি না। রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে গত বছর কিছু পাহাড়ি গাছ কাটা হয়েছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। আমি কোনো ধরনের রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ কাটিনি।’ রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর কোনো লোক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
বন বিভাগের বান্দরবান ডিভিশনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মো. কামাল হোসেন এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পাল্পউড বিপুল কৃষ্ণ দাশ বলেন, ‘বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত বছর যারা রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ কেটেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নতুন করে রিজার্ভ ফরেস্টে গাছ কাটার কোনো খবর আমরা পায়নি। রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ কাটার প্রমাণ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিজার্ভ ফরেস্টে বৃক্ষ কর্তন ও চম্পাফুল গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’