বন্যায় বিপর্যস্ত কুড়িগ্রাম, ত্রাণের জন্য হাহাকার
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু কমছে না বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। জেলার চার লাখেরও বেশি মানুষ উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উঁচু এলাকার বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। তবে নৌকা ও কলাগাছের ভেলায়ও বাস করছেন অনেক মানুষ।
বন্যার কারণে গত ছয়দিন ওই জেলায় ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জেলার আট হাজার পুকুরের প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ।
বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে চলছে খাবারের জন্য হাহাকার। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটছে বানভাসি মানুষ। ঘরের খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং অনেক পরিবার রান্না করতে না পারায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে মানুষ।
জেলা প্রশাসন থেকে চাহিদামতো ত্রাণ বরাদ্দের কথা বলা হলেও বন্যাদুর্গত অনেক এলাকায় ত্রাণের চাল পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বানভাসি মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলার অববাহিকার চর সারডোব গ্রামের মজিবর রহমান জানান, বন্যা শুরুর পর থেকে পার্শ্ববর্তী চরের প্রায় দুই হাজার পরিবার স্থানীয় বাঁধে আশ্রয় নিলেও এক প্যাকেট রান্না করা খিচুড়ি ছাড়া আর কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।
এমন অভিযোগ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অনেক চরাঞ্চলের। তবে দুর্গম চরের মানুষের ভাগ্যে জোটেনি এক প্যাকেট খিচুড়িও।
গত রোববার থেকে বালাডোবার চরে সিএলপির ভিটায় অবস্থান করা আমির হোসেন জানান, ‘পরিবারের চার সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার তিনটি ঘরের মধ্যে দুটি ঘর পানির স্রোতে ভেসে গেছে।’ আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো প্রকার সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রামে অন্যান্য নদ-নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে জেলার নয় উপজেলার ৮২০টি গ্রামের চার লাখেরও বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। বানভাসি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিলেও অনেকেই বসবাস করছেন নৌকা ও কলাগাছের ভেলায়। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষের সবাই পানিবন্দি। এরা সবাই দিনমজুর শ্রেণির। বন্যা শুরুর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ১১ টন চাল ও ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে; যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। ইউনিয়নের সব মানুষকে ত্রাণ দিতে গেলে আরো অন্তত ৩০ টন চাল প্রয়োজন।
উলিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। যেসব এলাকার মানুষ এখনো ত্রাণ পায়নি, পর্যায়ক্রমে সেসব এলাকাতেও ত্রাণ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ২৩ লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ৮৫১ টন চাল এবং দুই হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।