অপহরণের পর প্রধান শিক্ষককে শিকলবন্দি!

অপহরণের ১১ দিন পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হককে নাটোরের সিংড়া থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় র্যাব অপহরণকারী চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে দেশি অস্ত্রসহ আটক করেছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী র্যাব ৫-এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাগমারা ক্যাম্পের একটি অপারেশন দল মঙ্গলবার বিকেলে নাটোরের সিংড়া উপজেলার সাহেব আটঘোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হককে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চামটা ঠাকুরপাড়ার মোশাররফ হোসেন (৪১) ও তাঁর সহযোগী একই জেলার সিংড়া উপজেলার সাহেবের আটঘোলা গ্রামের বুলু আকন্দ (৫৬), একই উপজেলার বনকুড়ুল গ্রামের শাহ আলম (২৫) ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গাবড়গাড়ী গ্রামের আবদুর রাজ্জাককে (৪০) দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক (৫৫) নাটোরের মোশাররফ হোসেন ওরফে জামানের কাছে ৫০ হাজার টাকা পেতেন। মোশাররফ টাকা দেওয়ার কথা বলে গত ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক এমদাদকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার জামতলা মোড়ে ডেকে নেন। এরপর মোড় থেকে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে মোশাররফ তাঁকে শাহাদাত নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাতের খাবারের পর মোশাররফ ও তাঁর তিন সহযোগী স্কুলশিক্ষককে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে। পরে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর তারা নির্বিঘ্নে মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত স্কুলশিক্ষক যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কারো নজরে না পড়ে, সেজন্য দুর্গম ও কম জনবসতিপূর্ণ সাহেব আটঘোলা এলাকার বুলুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিক্ষক এমদাদকে শিকল দিয়ে আটকে রাখে। অপহরণকারীদের সঙ্গে অনেক দেন-দরবারের পর মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে তাঁর পরিবার। অপহণকারীরা ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানালে অপহৃতকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় অপহরণকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর অপহৃতের পরিবার র্যাবের কাছে অভিযোগ করে। এরপর অপহৃতকে জীবিত উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব ৫ গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সেপ্টেম্বর অপহৃত ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করার পর র্যাব প্রথমে মোশাররফকে আটক করে। এরপর তাঁকে নিয়ে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু করলে অপহরণকারীরা অপহৃত এমদাদকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। র্যাব ৫-এর এএসপি জামাল আল নাসেরের নেতৃত্বে একটি অপারেশন দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছাতারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হককে শিকল দিয়ে আটকানো অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায়, অপহৃত স্কুলশিক্ষক তাঁদের পূর্ব পরিচিত। তাই মুক্তিপণ আদায়ের পর পরই তাঁরা তাঁকে হত্যা করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেছিল।