হাসপাতালে ‘গোরখোদক’ মনু মিয়া, সঙ্গী ঘোড়াটি মারল কারা ?

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের প্রবীণ মো. মনু মিয়া, যিনি ‘গোরখোদক মনু মিয়া’ নামে এলাকায় পরিচিত। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তার অসুস্থতার সুযোগে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার একমাত্র বাহনসঙ্গী ঘোড়াটিকে। যে ঘোড়াটি তার কবর খননের কাজে ছিল নিত্যসঙ্গী।
মনু মিয়া পেশাগতভাবে কখনোই গোরখোদক ছিলেন না। কিন্তু মানবসেবাকে নিজের ধর্ম মনে করে মৃত্যু সংবাদ পেলেই ছুটে যেতেন কবর খননে। কোদাল, করাত, দা, ছেনি সব সরঞ্জাম ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে তিনি পৌঁছে যেতেন নির্ধারিত স্থানে। কোনো পারিশ্রমিক না নিয়েই ৪৯ বছরের দীর্ঘ জীবনে ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। এই মানবিক যাত্রার সঙ্গী ছিল একটি ঘোড়া, যার নাম বাহাদুর। মনু মিয়া নিজের ধানিজমি বিক্রি করে সেই ঘোড়াটি কিনেছিলেন, যাতে কবর খননের কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।
মনু মিয়া বর্তমানে ঢাকার ধানমণ্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার প্রিয় বাহাদুর ছিল পরিবারের নজরদারির বাইরে। এই সুযোগে কে বা কারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে সেই ঘোড়াটিকে। গত ১৬ মে (শুক্রবার) মিঠামইন উপজেলার কাঠখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে ঘোড়াটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর মতে, ঘোড়াটি হত্যার ঘটনাটি চরম অমানবিক ও হৃদয়বিদারক।
স্থানীয়রা জানান, হত্যার আগের দুই দিন ঘোড়াটিকে ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়, কিন্তু কে বা কারা এই নৃশংস কাজ করেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এলাকাবাসী এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম মুঠোফোনে জানান, ‘তারে (মনু মিয়া) তাড়াহুড়া করে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। ঘোড়াটাকে দেখার মতো কেউ বাড়িতে ছিল না। হয়তো রশি ছিঁড়ে বের হয়ে গেছে। এখন শুনলাম ঘোড়াটাকে মেরে ফেলেছে। তার (মনু মিয়ার) কাছে এই ঘোড়াটা সন্তানের মতো ছিল। নিজের থেকেও বেশি আদর করতো। আমরা এর বিচার চাই।’
এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার।