সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা, আরো ৫৪ জনের আত্মসমর্পণ

সুন্দরবনের আরো ছয়টি দস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। এ নিয়ে সুন্দরবনের মোট ৩২ বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দেন। এ সময় সুন্দরবনে এখন থেকে দস্যুমুক্ত অবস্থায় জেলেরা মৎস্য শিকার করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পর্যটকদের জন্যও সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার তালুকদার, র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, বিজিবির আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ আল মামুন, র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান, র্যাব-৮ এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, র্যাব ৬-এর সিও উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজিব, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
সুন্দরবনের ছয়টি দস্যু বাহিনীর ৫৪ জন সদস্য আজ বৃহস্পতিবার ৫৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। ছবি : এনটিভি
পরে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে বনদস্যুরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন ভুলেও দস্যুতার কথা চিন্তা না করেন। তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধ্য হবে প্রশাসন।
এ সময়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের চারটি এলাকায় র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এখন সময় হয়েছে সুন্দরবনে যারা অস্ত্র, গুলি ও খাবার দিয়ে দস্যুদের সাহায্য করেছে তাদের খুঁজে বের করার। এ সময় তিনি স্থানীয় এক বনদস্যুর মেয়ের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন।
এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করা বাহিনীগুলোর মধ্যে আনোয়ারুল বাহিনীর আটজন, তৈয়াবুর বাহিনীর পাঁচজন, শরিফ বাহিনীর ১৭ জন, ছাত্তার বাহিনীর ১২ জন, সিদ্দিক বাহিনীর সাতজন ও আল আমিন বাহিনীর পাঁচজন সদস্য ৫৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দেন।
র্যাবের তৎপরতায় ২০১৬ সালের ১ জুন প্রথম বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে নয়জন সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’র প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার আত্মসমর্পণ করেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে মানজার বাহিনীর প্রধান মানজার সরদার, মজিদ বাহিনীর প্রধান তাকবির বাগচী মজিদ, বড় ভাই বাহিনীর প্রধান আবদুল ওয়াহেদ মোল্লা, ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান মো. ফারুক মোড়ল, সুমন বাহিনীর প্রধান জামাল শরিফ সুমন, দাদা ভাই বাহিনীর প্রধান রাজন, হান্নান বাহিনীর প্রধান হান্নান, আমির বাহিনীর প্রধান আমির আলী, মুন্না বাহিনীর প্রধান মুন্না, ছোট শামছু বাহিনীর প্রধান শামসুর রহমান, মানজু বাহিনীর প্রধান মো. মানজু সরদার ও সূর্য বাহিনীর প্রধান সূর্যসহ ২৯টি বনদস্যু বাহিনীর ২৭৪ সদস্য ৪০৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৯ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
সর্বশেষ ছয়টি বনদস্যু বহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর বনদস্যুদের হাত থেকে বনজীবী মানুষ এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।