প্রচন্ড গরমে শান্তির পরশ গৌরাঙ্গের এক গ্লাস ঘোল

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘোল তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গৌরাঙ্গ ঘোষ (৫০)। তারপর ৫ ফুট লম্বা একটা ভারবাঁশের দুই পাশে রশির সঙ্গে ঘোলের হাঁড়ি দুটি ঝুলিয়ে ঘোল বিক্রি করতে গ্রামে নেমে পড়েন।
প্রতি গ্লাস ঘোল ১০ টাকা করে বিক্রি করেন গৌরাঙ্গ ঘোষ। তার ঘোল খুবই সুস্বাদু। তাই এই প্রচন্ড গরমে হালকা লবণ মিশ্রিত ১ গ্লাস ঘোল পিপাসিত মানুষের শান্তির পরশ যোগায় বলে জানান এলাকাবাসী।
গৌরাঙ্গ ঘোষ গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার উনশিয়া গ্রামের গোসাই চন্দ্র ঘোষের ছেলে। গোসাই চন্দ্র ঘোষ জীবিত থাকা অবস্থায় প্রায় ৫০ বছর ধরে এই ঘোলের ব্যবসা করেছেন। তার মৃত্যর পর ছেলে গৌরাঙ্গ ঘোষ বাবার রেখে যাওয়া ঘোল ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি গরুর দুধ ক্রয় করেন গৌরাঙ্গ ঘোষ। রাতে সেই দুধ দই করে সকালে একটি বড় হাঁড়িতে রেখে কিছু পানি মিশিয়ে বাঁশের চর্কি ঘুরিয়ে ঘোল তৈরী করেন গৌরাঙ্গ।
এই পানি মিশ্রিত দই চর্কি দিয়ে ঘুরানোর মাধ্যমে উপরে যে আবরণটি তৈরী হয় সেটা হলো মাখন। আর এই মাখন জ্বালিয়ে তৈরী করা হয় ঘি। আর নিচের তরলটিকে ঘোল হিসেবে বিক্রি করা হয়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এভাবে ঘোল বানিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছেন গৌরাঙ্গ ঘোষ। যা আয় হয় তাই দিয়ে দুই ছেলের লেখাপড়া করিয়ে অনেক কষ্ট করে ৪ জনের সংসার চলে।
বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা গৌরাঙ্গ ঘোষ ধরে রাখলেও দুই ছেলেকে দিয়ে এই ব্যবসা তিনি করাতে চান না। তার ইচ্ছে ছেলেরা শিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে দুটি ছেলেকে কলেজে পড়াতে গৌরাঙ্গের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাড়িতে নেই বসত করার মতো একটি ঘর। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘোল তৈরীর চর্কিচাও এখন ঘুরাতে কষ্ট হয়।
উনশিয়া গ্রামের যুবক আরিফ হাজরা বলেন, ছেলেবেলা থেকেই গৌরাঙ্গ ঘোষের ঘোল খাই। শীত মৌসুমে কম খাই। গরমের মৌসুমে বেশী খাই। এই ঘোল খুবই সুস্বাদু। গরমের সময় ১ গ্লাস ঘোল খেলে শরীরডা ঠান্ডা হইয়া যায়।
ঘাঘর বাজারের ব্যবসায়ী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, মাঝে মাঝেই বাজারে বসে গৌরাঙ্গ ঘোষের ঘোল খাই। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ১ গ্লাস ঘোল খুবই মজাদার।

গৌরাঙ্গ ঘোষ বলেন, ৩০ বছর ধরে ঘোল বিক্রি করে সংসার চালাই। এক ছেলে ঢাকা কলেজে অনার্স পড়ছে। ছোট ছেলেটি কোটালীপাড়া কলেজে পড়ে। এদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে বাড়িতে একটি ঘর পর্যন্ত করতে পারিনি। একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছি। তাই সরকার বা সমাজের বিত্তশালী কোন ব্যক্তি আমাকে যদি একটি ঘর ও একটি দুধ ভাঙানো মেশিন দিতো তা হলে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে আমি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম।