বাজারে চেয়ারে বেঁধে কুপিয়ে ছাত্রদল নেতাকে খুন

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রাজ্জাককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার ঈদের দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চেয়ারম্যান বাজারে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাজ্জাক উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নের জিন্নাগড় গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের পরিবার এ ঘটনায় সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দায়ী করেছে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ খবর পেয়েও নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
যদিও এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। তার আগে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি পুলিশ।
নিহতের ছোট ভাই আবদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘রাতে ছাত্রদল সভাপতি আবদুর রাজ্জাক একটি বাসায় দাওয়াত খেয়ে চেয়ারম্যান বাজারে ১০-১২ জন দলীয় নেতাকর্মীকে নিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সবাইকে মারধর করে বাজার ফাঁকা করে দেয়। পরে বাজারের মাঝখানে একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাজ্জাককে এলোপাতাড়ি কোপানো ও পেটানো হয়। এ সময় বাজারের সব মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যায়।’
খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয় ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কাজী মঞ্জুর আহমেদ চরফ্যাশন, দক্ষিণ আইচা ও শশীভূষণ থানা পুলিশকে অবহিত করেন। কিন্তু পুলিশ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন নিহতের ছোট ভাই।
গুরুতর অবস্থায় আবদুর রাজ্জাককে উদ্ধার করে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তিনি মারা যান।
আবদুর রহমান আরো বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরাই রাজ্জাককে হত্যার জন্য আরো একবার বাসায় হানা দিয়েছিল। কিন্তু তখন কিছু করতে পারেনি। পরে একসময় ছাত্রলীগের লোকজন রাজ্জাকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেয়। আজ তারা সেটাই করেছে।’
খবর পেয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার আল-আমিন, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়াসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার আল-আমিন হাসপাতালে এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাজারে প্রকাশ্যে রাজ্জাককে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে চলে যায়। এতে কোনো ইন্ধনদাতার নির্দেশ আছে।’
এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি।
এ হত্যাকাণ্ড ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পূর্বপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। তিনি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দায়ীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
চরফ্যাশন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান স্বপন বলেন, ‘আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই। আসলে পুরো ঘটনা এখনো শুনিনি। তবে এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড যারাই করে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা তা রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ভালো করে জানতে হবে আগে। আমি এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করব না।’