এস এম সুলতান স্মরণে আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী

বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইলে শুরু হয়েছে ১০ দিনব্যাপী সুলতান মেলা। আর এই মেলার সবচেয়ে বড় আয়োজনটি হলো ‘আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী’।
সুলতান মঞ্চের পাশে ভিক্টোরিয়া কলেজের দর্শন বিভাগের হলরুমে ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই চিত্র প্রদর্শনী চলবে আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ১১৮টি চিত্রকর্ম।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, জাপান, ইরান, তাইওয়ান, আমেরিকা, কানাডা, ইতালি ও জিম্বাবুয়ের শিল্পীদের ছবি স্থান পেয়েছে। নড়াইলের শিশুশিল্পী ও সুলতান শিষ্যদের ছবিও রয়েছে এখানে।
নড়াইলে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী হওয়ায় দর্শকদের আগ্রহের শেষ নেই। ছাত্রছাত্রীসহ নানা বয়সের চিত্রশিল্পী ও স্থানীয় দর্শনার্থীরা ভিড় করেছেন প্রদর্শনী দেখতে। তা ছাড়া এ ধরনের আয়োজনে খুশি স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী ও আয়োজকরাও।
তবে ভেন্যু নিয়ে সন্তুষ্ট নন কেউই। নড়াইলে একটি আর্ট গ্যালারির দাবি রয়েছে তাঁদের। শিল্পী সুলতানের জন্মস্থানে একটি স্থায়ী আর্ট গ্যালারি তৈরি হলে শিল্পচর্চা আরো বৃদ্ধি পাবে এমন প্রত্যাশা সুলতানপ্রেমী মানুষদের।
আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী নড়াইলের সদস্য সচিব শমির কুমার বৈরাগী বলেন, ‘শিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশন আমরা করতে পেরেছি। এখানে ১১টি দেশ অংশ নিচ্ছে এবং ১১৮টি শিল্পকর্ম এখানে স্থান পেয়েছে। এখান থেকে পাঁচজন চিত্রশিল্পীকে আমরা সুলতান ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড দিতে যাচ্ছি। আগামীতে এটিকে আরো প্রসারিত করার জন্য নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানের স্থায়ী একটি আর্ট গ্যালারি আমাদের দরকার। এটি হলে আমাদের এখানে বাইরের দেশের পর্যটকরাও আসবেন বলে আশা করছি। এবং আরো বিশেষ একটি বিষয়, বাংলাদেশের কোনো আর্টিস্টকে নিয়ে এই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশন আমরা সুলতান ফাউন্ডেশন থেকে করতে পারলাম। এর আগে ঢাকার বাইরে কোনো ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন হয়নি। এটা সুলতান ফাউন্ডেশনের হয়ে আমরা নড়াইলবাসী করতে পেরেছি।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এস এম জে শরফুল আলম লিটু বলেন, ‘মেলার যে আঙ্গিক, আঙ্গিকটাকে বাড়াতে বাড়াতে এখন প্রতিনিয়ত মেলায় মানুষের ঢল নামে। মানুষ নতুন নতুন কিছু দেখতে চায়। আমরা সেই জায়গাটিই এবার পূরণ করতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সুলতান মেলায় রূপদান করা। ১১টি দেশ তাদের নিজস্ব চিত্রকর্ম নিয়ে অংশ নিয়েছে এবারের সুলতান মেলায়।
এস এম সুলতান শিশু সংগঠনের সংগঠক শেখ হানিফ বলেন, এবারই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের এই গ্যালারি যুগোপযোগী করে হয়নি। এটা ভবিষ্যতে আরো সুন্দর করে করা যায় কি না, বড় করে করা যায় কি না এটা ভাবতে হবে। মোট ১১টি দেশ অংশ নিয়েছে। সে হিসেবে এখানে আরো শিল্পীদের আনার সুযোগ আছে। এটি আমরা চেষ্টা করলেই পারি। আমি আশা রাখি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি দেখবে। এই মেলার মান আরো একধাপ উন্নতি করা হবে বলে আমি আশা করি।
খুলনা সরকারি আর্ট কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুর রহমান বলেন, ‘সুলতান মেলা দীর্ঘদিন ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং আপনারা এটা জেনেও খুশি হবেন, পৃথিবীর কোনো দেশে আমার জানা মতে একজন চিত্রশীল্পির উপরে এত বড় মেলা হয়নি। সেই চিত্রশীল্পি জুড়েই এবার যে উন্মাদনা, সেটি হলো, প্রায় ১১টি দেশের লোক, তাঁরা তাঁদের ছবি নিয়ে এখানে হাজির হয়েছেন। এর কারণ, সুলতানকে তাঁরা অনুসরণ করেন, সুলতানের কাছ থেকে তাঁরা শিক্ষা নিতে চান। সুলতানের ছবির মধ্যে যে জাতীয় চেতনার ভাষা, সে ভাষা থেকে তাঁরা নিজেরাও ঋদ্ধ হতে চান। আমরা মনে করি, সুলতান মেলার এটি একটি ব্যতিক্রমী দিক এবং ভবিষ্যতে এই মেলার বিস্তৃতি আরো বেড়ে যাবে এবং এই মেলা মানুষের মেলায় রূপান্তরিত হবে।’