মোংলা বন্দরে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে দুটি চাঁদাবাজি মামলা

মোংলা বন্দর জেটি থেকে রামপালের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পশুর নদীতে ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজে জ্বালানি তেল সরবরাহের বকেয়া টাকা পরিশোধকে কেন্দ্র করে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরস্পরবিরোধী চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বন্দরের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল জানান, এ ঘটনায় ব্যবসায়ীসহ এ বন্দরের অনেকটাই সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। দুটি দেশীয় কোম্পানি পরস্পরের সঙ্গে মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারীই এ বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মের্সাস নুরু অ্যান্ড সন্স কোম্পানি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যবসা করে বেশ কয়েক বছর ধরে সুনাম অর্জন করেছে। এজন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এ প্রতিষ্ঠান কয়েকবার পুরস্কৃতও হয়েছে। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীরা এর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। সম্প্রতি এইচ এম দুলাল মোংলা বন্দর জেটির সামনে থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদী খননের আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভির সঙ্গে জ্বালানি তেল (ডিজেল/ফার্নেস) সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর সে অনুযায়ী তেলও সরবরাহ করেন দুলাল। কিন্তু তেল সরবরাহের মূল্য হিসেবে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে মের্সাস নুরু অ্যান্ড সন্সের মালিক দুলাল প্রায় তিন কোটি ৬৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওনা হন। এরই মধ্যে পাওনা টাকার মধ্যে তিন দফায় ৩৬ লাখ ২২ হাজার ৮০০ এবং এক কোটি আট লাখ ৫০ হাজার ও দুই কোটি টাকার চেক দেয় কোম্পানিটি। কিন্তু ওই চেকের টাকা ছাড় করাতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রায়তীকুশাল সি ঈগল ড্রেজিং জেভির বাংলাদেশের স্থানীয় এজেন্ট খুলনার সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ তার সহযোগীরা।
এর আগে ২০১৬ সালে সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ মো. রফিকুল ইসলাম বাবলু জ্বালানি তেল সরবরাহ বাবদ চাঁদা চাইলে দুদফায় নুরু অ্যান্ড সন্সের পক্ষ থেকে তাঁকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়া হয়। সম্প্রতি মূল কোম্পানির জ্বালানি সরবরাহের দেওয়া চেকের ওই টাকা ছাড় করাতে গেলে বাবলু ও তার সহযোগীরা দুলালের কাছে আবারও এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৬ আগস্ট প্রকাশ্যে মোংলা বন্দরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং চত্বর এলাকায় নুরু অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার সাধন কুমার চক্রবর্তীকে বাবলুসহ তাঁর সহযোগীরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর এবং অপহরণের চেষ্টাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় সাধনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে বাবলু তাঁর বাহিনী নিয়ে সটকে পড়েন।
এ ঘটনায় মের্সাস নুরু অ্যান্ড সন্সের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে বাবলুকে আসামি করে মোংলা থানায় চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। গতকাল শনিবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী।
এদিকে, এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সিগমা শিপিং লাইন্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু নানাভাবে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন।
এইচ এম দুলাল অভিযোগ করে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের পাওনা টাকার চেক আটকিয়ে চাঁদা দাবি করেই বাবলু ক্ষ্যান্ত হননি, উল্টো আমার বিরুদ্ধে একই দিনের বিকেলের ঘটনা সাজিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আদালতের মাধ্যমে থানায় উদ্দেশ্যমূলক একটি মিথ্যা মামলা করেন।’
এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে দুলাল মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘চাঁদাবাজির দুটো ঘটনাই আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে কোনটি সঠিক ও আসল ঘটনা।’ ওসি অবশ্য এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বাবলুর বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।