জায়গা সংকটের কারণে ৩২ জেলার মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন না

মুসলমানদের মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা সামনে রেখে টঙ্গীর তুরাগতীরে চলছে ময়দান প্রস্তুতির কাজ। ময়দানের আশপাশের এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে কাজ করতে আসছেন স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা। জায়গা সংকটের কারণে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন ইজতেমায়।
ইজতেমা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর থেকে দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিদের নিয়ে দুই পর্বে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। এবার বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবে দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিরা। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৭ সালে দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন। গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগতীরে এবারের ২০১৬ সালের বিশ্ব ইজতেমা তিন দিনের প্রথম পর্ব শুরু হবে ৮ জানুয়ারি এবং ১০ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি, শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বিরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেন। এ কারণে অনেকটা জোরেশোরেই চলছে ময়দান প্রস্তুতির কাজ।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমার ময়দানে মুসল্লিদের স্থান না হওয়ায় এ বছর থেকে দেশে ৬৪ জেলাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এবারে বিশ্ব ইজতেমায় দুই ধাপে অংশ নেবেন দেশে ৩২টি জেলার মুসল্লিরা। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৭ সালে দুই ধাপে অংশ নেবেন। প্রতিটি জেলার মুসল্লিরা এক বছর পরপর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। যেসব জেলা এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবে, সেসব জেলা আগামী ২০১৭ সালে অংশ নিতে পারবে না। এবার যে জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না, সেসব জেলায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিদেশি মুসল্লিরা প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন।
গিয়াস উদ্দিন আরো জানান, ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই ধাপে করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিরা প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পেরেছেন। এবার মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং স্থান না হওয়ায় ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিতে পারছেন না বিশ্ব ইজতেমায়। এবার থেকে প্রতিবছর ৩২ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন। ২০১১ সালের আগে প্রতিবছর এক ধাপে অনুষ্ঠিত হতো বিশ্ব ইজতেমা।
টঙ্গীর তুরাগতীরে ১৬০ একর জায়গার ওপর চট ও বাঁশ দিয়ে ছাউনি তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠের সংস্কারকাজ করতে দেখা গেছে। মুসল্লিদের থাকার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ছাউনি। এর জন্য পুরো মাঠেই বাঁশের খুঁটি স্থাপন করা শেষ। মাঠের পশ্চিম পাশে মাটি সমানের কাজ করছেন মুসল্লিরা। বিদেশি মেহমানদের থাকার জন্য লোহার খুঁটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আলাদা কামরা। ময়দানে মূল বয়ানের মঞ্চ তৈরির কাজও চলতে দেখা গেছে।
ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের চারপাশে কাঁচা-পাকা টয়লেটের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। ময়দানের চারপাশেই রয়েছে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ দোতলা-তিনতলা টয়লেট। তবে মুসল্লিদের সুবিধার্থে এর পাশেও কাঁচা-পাকা আরো টয়লেট স্থাপনের কাজ চলছে। শনিবার টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে একসঙ্গে ৫০ জন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ময়দান সংস্কারের কাজ করেন তাঁরা। এই দলের মধ্যে থাকা রাহিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই এখানে কাজ করতে আসি। বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের থাকার সুবিধার্থে ছাউনি তৈরির কাজ করেছি। বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি, শুরুর আগেই শেষ হবে।’
এদিকে, পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার থেকে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকালে ইজতেমার ময়দানে ৪১ জনের একটি দল এসেছেন স্বেচ্ছায় কাজ করতে। ময়দানের পশ্চিম পাশে মাটি সমান করার কাজ করছেন তাঁরা। তিন দিন কাজ করবেন বলে জানান তাঁরা।
সেলিম মিয়া বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবারও ময়দানে কাজ করতে আসতে পেরেছি। প্রতিবারই আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে আসি। ভালো লাগে, মনে শান্তি লাগে এখানে কাজ করলে।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন-আর রশীদ বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মাঠের সব প্রবেশপথে ও কৌশলগত স্থানে ইলেকট্রনিক তল্লাশি (আর্চওয়ে) ব্যবস্থা, ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদক্ষেপ। ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুম এবং আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিমও থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা দু-একদিনের মধ্যে মিটিং করব।’
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আগত মুসল্লিদের সেবার জন্য ওয়াসা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগ নদের পারে ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইজতেমা এলাকায় অস্থায়ী দোকানপাট, স্থাপনা, বস্তি এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রি মনিটর, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও পচা-বাসি খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া ইজতেমা চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অশ্লীল পোস্টার, অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন এবং আপত্তিকর ব্যানার অপসারণ করা হবে।
ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি সম্পর্কে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আশপাশের এলাকা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছেন। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মুসল্লিদের জন্য ময়দানে পানির সুবিধা, বিদ্যুতের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং বিদেশি মেহমানদের থাকা ও নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এবারে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম ধাপে ১৭টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। সেসব জেলা ও খিত্তা হলো—ঢাকা ১ থেকে ৬ নম্বর খিত্তায়, শেরপুর ৭ নম্বর খিত্তায়, নারায়ণগঞ্জ ৮ ও ১১ নম্বর খিত্তায়, নীলফামারী ৯ নম্বর খিত্তায়, সিরাজগঞ্জ ১০ নম্বর খিত্তায়, নাটোর ১২ নম্বর খিত্তায়, গাইবান্ধা ১৩ নম্বর খিত্তায়, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫ নম্বর খিত্তায়, সিলেট ১৬ ও ১৭ নম্বর খিত্তায়, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯ নম্বর খিত্তায়, নড়াইল ২০ নম্বর খিত্তায়, মাদারীপুর ২১ নম্বর খিত্তায়, ভোলা ২২ ও ২৩ নম্বর খিত্তায়, মাগুরা ২৪ নম্বর খিত্তায়, পটুয়াখালী ২৫ নম্বর খিত্তায়, ঝালকাঠি ২৬ নম্বর খিত্তায় এবং পঞ্চগড় ২৭ নম্বর খিত্তায়।
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবেন ১৬টি জেলার মুসল্লিরা। ওই সব জেলা ও খিত্তা হলো—ঝিনাইদহ ৮ নম্বর খিত্তায়, জামালপুর ৯ ও ১১ নম্বর খিত্তায়, ফরিদপুর ১০ নম্বর খিত্তায়, নেত্রকোনা ১২ ও ১৩ নম্বর খিত্তায়, নরসিংদী ১৪ ও ১৫ নম্বর খিত্তায়, কুমিল্লা ১৬ ও ১৮ নম্বর খিত্তায়, কুড়িগ্রাম ১৭ নম্বর খিত্তায়, রাজশাহী ১৯ ও ২০ নম্বর খিত্তায়, ফেনী ২১ নম্বর খিত্তায়, ঠাকুরগাঁও ২২ নম্বর খিত্তায়, সুনামগঞ্জ ২৩ নম্বর খিত্তায়, বগুড়া ২৪ ও ২৫ নম্বর খিত্তায়, খুলনা ২৬ ও ২৭ নম্বর খিত্তায়, চুয়াডাঙ্গা ২৮ নম্বর খিত্তায় এবং পিরোজপুর ২৯ নম্বর খিত্তায়।