রাজশাহীতে ‘ড্যানিস গ্রুপে’ চাকরির নামে প্রতারণা!

চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজশাহীতে ‘ড্যানিস গ্রুপ’ নামের এক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েক শ বেকারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আজ শুক্রবার চাকরিপ্রত্যাশী দেড়শ জনের পরীক্ষা নিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সটকে পড়েন। তবে পুলিশ ওই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তাকে আটক করেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৯ নভেম্বর বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় ‘ড্যানিস গ্রুপে চাকরি’ শিরোনামে দেশের ২৬টি উপজেলা থেকে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজার, সিনিয়র অফিসার ও জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ২০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফটসহ দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। প্রাপ্ত আবেদনকারীদের ভেতর থেকে ১০০ জনের পরীক্ষা গত ৩০ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেই ১০ হাজার টাকা করে জামানত দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন।
এরপর আজ শুক্রবার আরো ১৫০ প্রার্থী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরীক্ষা দিতে আসেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলা থেকে এসেছিলেন ওমর ফারুক। তিনি ঢাকায় হা-মীম গ্রুপে চাকরি করেন। অফিসার হিসেবে চাকরি করবেন সেই আশায় তিনি রাজশাহীতে পরীক্ষা দিতে আসেন।
ওমর ফারুক বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পাঁচতলায় তাঁদের পরীক্ষা হয়। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পরে তারা খেয়াল করেন প্রশ্নপত্রের ওপর প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে ‘ড্যানিস ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি’। কিন্তু বিজ্ঞাপনে ছিল ‘ড্যানিস গ্রুপ’। তাতে ড্যানিস গ্রুপের পরিচিত মনোগ্রামও ছিল। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ওসব কিছু নেই। এ ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা বাইরে এসে দেখেন সব পদের একই প্রশ্নপত্র।
ওমর ফারুক আরো বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা আজ শুক্রবার পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর তাঁরা পরিচালক ওয়াজেদ আলীকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা জানতে চান, চাকরি পেয়ে তাঁদের কী কাজ করতে হবে। পরিচালক ওয়াজেদ আলী বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় তাঁদের পরিবেশক থাকবে। সেখানে টেলিভিশন, ফ্রিজ ইত্যাদি ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ করতে হবে। এবার তাঁরা ধরে বসেন ড্যানিশ গ্রুপের তো এ সব পণ্য নেই। এর মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ১০০ জন ‘অফিসার’ প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন। তাঁদের ১৮ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। বেতনও দেওয়া হয়নি।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরিচালক পালানোর চেষ্টা করলে পরীক্ষার্থীরা সবাই মিলে তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় স্থানীয় একজন যুবক এসে তাঁদের দেনা-পাওনা সব মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিচালককে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যান। পরে তাঁদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার্থীরা দুজন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে আটক করে কলেজের অভ্যর্থনা কক্ষের ভেতরে আটকে রেখে থানায় খবর দেয়। দুপুর ২টার দিকে বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটক দুই ‘ব্যবস্থাপক’ হচ্ছেন মাহমুদুল হাসান লিটন ও সাইদ আনোয়ার। লিটনের বাড়ি নগরীর ভদ্রা এলাকায়। সাঈদের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায়। তাঁরা জুনিয়র অফিসারদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে জামানত আদায় করেছেন।
জামানতের টাকা কোথায় জানতে চাইলে আটক মাহমুদুল হাসান লিন বলেন, তিনি জামানতের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। তিনি নিজেও ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন সেলিনা বেগম, খুলনা থেকে বিবেক হালদার ও নাটোর থেকে নুরুন্নাহার। তাঁরা সবাই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তাঁরা বলেন, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে বিশ্বাস করে এসেছিলেন। আজকেও একই বিজ্ঞপ্তি চাকরির বিজ্ঞাপন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
নগরীর মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পাশের একটি বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড-সর্বস্ব একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ড্যানিস ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি, রাজশাহী।’ তার নিচে লেখা রয়েছে ‘সাউথ এশিয়া অনলাইন মার্কেট’ হেড অফিস, রাজশাহী।
কথা বলার জন্য পরিচালক ওয়াজেদ আলীর মুঠোফোনের তিনটি নম্বরে যোগাযোগ করে সবকটি বন্ধ পাওয়া যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় আটক দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। আদালতেও পাঠানো হয়নি।
জানতে চাইলে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে দুজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে মামলা করলে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।