সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুনে তপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/12/photo-1452596111.jpg)
মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর তপ্ত হয়ে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেই মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ, শহরের বিভিন্ন স্থান ও রেললাইনে অগ্নিসংযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলস্টশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় শহর কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে সকালে দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরে আরো চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য শহরে নামে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে। গোটা শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরজুড়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে সংঘর্ষ ও মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনা তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)। তিনি শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে। বিকেলে নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেলার ঈদগা মাঠে জানাজার পর ভাদুঘরে দাফন করার কথা রয়েছে।
হাফেজ মাসুদুর রহমানের মৃত্যুর পর পরই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা বেশ কিছু স্থানে ভাঙচুর করে বলেও জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ সময়ে শহরের টিএ রোড এলাকা ও ব্রিজের মোড় এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেই দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রেলস্টেশন অবরোধ করে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মাঈনুল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিক্ষোভকারীরা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়েছে। তারা বেশ কয়েকটি সিগন্যাল ভেঙে ফেলেছে। তারা আমার কার্যালয়ে এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সিগন্যাল বোর্ড, টেলিফোনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে আখাউড়ার বাঘাচং স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, আযমপুরে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ও ভৈরবে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস আটকা পড়ে আছে বলেও জানান সহকারী স্টেশন মাস্টার। তিনি জানান, দুপুর ১২টার দিকে আবারও মাদ্রাসাছাত্ররা রেলস্টেশনে হামলা চালায়। এ সময় তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে।
দুপুরে বিক্ষোভকারীরা শহরের আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন ভাঙচুর করে এর বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়া, শিশু নাট্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়।
বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার সামনে সেতুর ওপর পুলিশের একটি ভাড়া করা পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ বিপুল পরিমাণ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এর আগে সকালে মাদ্রাসাছাত্র নিহত ও মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকূল চন্দ্র বিশ্বাসের অপসারণ এবং মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মওলানা মোবারক উল্লাহ।
মাদ্রাসা ছাত্ররা শহরের টিএ রোড, ঝাউতলি, রেল স্টেশন, কুমারখালী প্রভৃতি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। তারা এসব এলাকা হরতালের সমর্থনে মাইকিং করছে।
অপরদিকে বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলাম, জেলা ম্যাজিস্টেট মো. সামছুল হকের পক্ষে মাইকিং করে ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।