প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যজুড়ে সরকারের সাফল্য

ক্রিকেট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনীতি, দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দুই বছর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ৩০ মিনিটের ভাষণে তিনি সরকারের বিস্তারিত সাফল্য তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ দিয়ে সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
পেট্রলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং এক হাজার ১৮০ জন আহত হয়। দুই হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও আটটি লঞ্চে আগুন দেয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’
‘জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম-আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবের হুকুম দেন।’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতায় দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চরম খাদ্যাভাব। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরের দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসে। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, ভারতের ১৪০ এবং পাকিস্তানের ১৪৯তম।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের বিশ্বশান্তি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম, ভারতের ১৪৩তম এবং পাকিস্তানের ১৫৪তম। ইকোনমিস্টের ইনটেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০৮তম। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক তৃতীয় জাতিসংঘ বিশ্ব সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন : ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।’
তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এত দীর্ঘ সময় ধরে ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বিএনপি-জামাতের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এখন বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘২০০৬ সালে অতি দরিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। তা এখন ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকরি দিয়েছি। আমাদের সময়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে। ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে। ৪৪ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে।’
‘প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাব ইনশা আল্লাহ। ২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৫ সালে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক দুই হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ১৬টির কাজ চলছে। যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে,’ জাতির উদ্দেশে বলেন প্রধানমন্ত্রী।