সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী দেখে অভিভূত মার্কিন রাষ্ট্রদূত

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণীর বিচরণ দেখে অভিভূত হয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। মঙ্গল ও বুধবার ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন সফরে থাকা মার্কিন রাষ্ট্রদূত জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বনের নয়নাভিরাম প্রতিবেশ পর্যটন (ইকো-ট্যুরিজম) এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন।
ইউএসএআইডির বাঘ প্রকল্পের অধীনে সুন্দরবনের পর্যটন জাহাজ ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’-এ দুদিনব্যাপী এক সংলাপে যোগ দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার জন্য জাতীয় এই সংলাপে অংশ নেওয়া বার্নিকাট মঙ্গলবার রাতে মৃগমারী এলাকায় রাত্রিযাপন শেষে বুধবার ভোরে তাম্বুলবুনিয়া এলাকার পাখি খালে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির আনাগোনা প্রত্যক্ষ করেন।
এরপর তিনি সকালে শ্যালা নদীতে স্মার্ট প্যাট্রলিং মহড়ার উদ্বোধন করেন। বুধবার বিকেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের (মংলা) ধানসাগর এলাকার ইকো-ট্যুরিজম এলাকাগুলো ঘুরে দেখন।
রাতে তিনি হরিণটানা এলাকায় অবস্থান করে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সুন্দরবন ঘুরে দেখবেন। প্রাকৃতিকভাবে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার জোয়ারে রূপ বদলানো এই বনের নয়নাভিরাম ইকো-ট্যুরিজম এলাকা ঘুরে দেখে তিন দিনের সুন্দরবন সফর শেষ করবেন রাষ্ট্রদূত।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশের প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বনে ৪৫০টি নদ-নদী ও খালসহ জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার।
বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকা নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন দুটি বিভাগের চারটি রেঞ্জের অধীন ৫৮টি কম্পার্টমেন্টে রয়েছে। রয়েছে কটকা-কচিখালী, নীলকমল ও পশ্চিম অভয়ারণ্য নামে তিনটি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট।
বনে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, কেওয়া, ধুন্দল, বাইনসহ রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা। আরো রয়েছে ১৬৫ প্রজতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বন্য প্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি সুন্দরবনে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, বনমোরগ, উদবিড়াল, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, লোনাপানির কুমির, কচ্ছপ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী।
৩০০ প্রজাতির পাখি, রুপালি ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, এক প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির মলাস্কা বা শামুক-ঝিনুক।
ইউএসএআইডি পরিচালিত বাঘ রক্ষা প্রকল্পের এই জাতীয় সংলাপে অংশ নেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ ও বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুদিনব্যাপী এই জাতীয় সংলাপে বাঘের আবাসস্থল, খাদ্যাভ্যাস, প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাঘসহ সুন্দরবনের বন্য প্রাণীর পাচার রোধ, বাঘ রক্ষায় টহল জোরদার, টহল টিমের প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জিপিএস ডাটাবেজ তৈরি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি খুব কাছ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বনের নয়নাভিরাম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।