উত্তরবঙ্গের আশার আলো ‘উত্তরা ইপিজেড’

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পাল্টে দিয়েছে জেলার মানুষের জীবিকার চিত্র। এই রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে অন্যান্য কারখানার পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আর মঙ্গাকিবলিত এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতিকভাবে মুক্তির পথ প্রশস্থ করে দেওয়ায় ভূমিকা রেখে এই ইপিজেড যেন পরিণত হয়েছে উত্তরবঙ্গের আশার আলোতে ।
মঙ্গাপীড়িত অবহেলিত শুধু নীলফামারী জেলাই নয় এ অঞ্চলের মানুষ এখানকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভাবকে দুরে ঠেলে দিয়েছেন। শুধু তাই ই নয় বিদেশের বাজারে এখানকার উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদাও সৃষ্টি করেছেন ।
উত্তরা ইপিজেডে এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরী, ওয়েসিস ট্রান্সফরমেশন লিমিটেড, ম্যাজেন ইন্ডাস্ট্রিজ, ভেনচুরা লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং, সেকশন সেভেন ইন্টারন্যাশনাল, কোয়েস্ট এক্সেসরিজ, কেপি ইন্টারন্যাশনাল, এস এ ইন্টারন্যাশনাল, ফারদিন এ্যাক্সেসরিজ, সনিক বাংলাদেশ, ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিজ, উত্তরা সোয়েটার ম্যানুফ্যাকচারিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করছে।
এই ইপিজেডে বাংলাদেশ ছাড়াও হংকং, যুক্তরাজ্য এবং চিনভিত্তিক বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরচুলা, বাঁশ বেত, সানগ্লাস,লেদার ব্যাগ,ওয়ালেট,প্যান্ট, শার্ট, হ্যাংগার, সুয়েটার ও খেলনা পণ্যসহ নানা সামগ্রী তৈরি হচ্ছে।
২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশি ইউনিয়নে দুইশ ১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ইপিজেড উদ্বোধন করেন। ইপিজেডে বাণিজ্যিক একশ ৮০টি প্লটের মধ্যে একশ ৩৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এখানে দেশী ও বিদেশী ফ্যাক্টরীগুলোতে কাজ করছে অন্তত ২১ হাজার শ্রমিক।
উত্তরা ইপিজেডে ওয়েসিস কফিনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান কফিন তৈরি করছে। যা এই ইপিজেডের মধ্যে ব্যতিক্রম একটি প্রতিষ্ঠান। আর এই উৎপাদিত কফিনগুলো যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। বলা যায় নীলফামারীতে উৎপাদিত কফিনের উপর ইউরোপের বাজারগুলি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরির পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কফিনগুলো প্যাকেটজাত হয়ে সরাসরি পাঠানো হয় ।
ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল জানান, আমাদের এই এলাকার মানুষ কয়েক বছর আগেও ছিল মঙ্গায় জর্জরিত। ইপিজেড চালু হওয়ার পর প্রতিটি বাড়ি থেকে এক থেকে তিনজন নারী-পুরুষ এখানে কাজ করছে। যাদের ভাঙ্গাচোরা বাড়ি-ঘর ছিল তারাই আজ পাকা বাড়ি দিয়েছেন। এই এলাকায় এখন ক্ষেতে খামারে কাজ করার কোন ক্ষেত মজুর পাওয়া যায়না।
আব্দুল জলিল আরও বলেন, যারা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার কথা চিন্তাই করতো না তাঁদের ছেলে-মেয়েরাও আজ স্কুলে যায়। তাদের চোখে-মুখে এখন অনেক সোনালী স্বপ্ন। তারা এখন স্বচ্ছল পরিবার।
নারী শ্রমিক নাজমা বেগম জানান, এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ইপিজেডে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারে এখন পরিবর্তন এসেছে। দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত পরিবারগুলো আজ স্বচ্ছল। তাদের নেই কোন অভাব।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল আলম ডাবলু জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইপিজেডে বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উত্তরা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করছে। দেশী-বিদেশী অনেক স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী উত্তরা ইপিজেডে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।