খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে চলছে শিশুদের পাঠদান

নওগাঁর পোরশা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউপির বড়রনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মাটিতে চটের ওপর বসে ক্লাস করতে হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের। এ বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের এমন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে বহুদিন থেকে।
বড়রনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কয়েকটি মাটির ঘর তৈরি করে বিদ্যালয়টি চালু করা হয় এবং শুরুর দিকেই বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হয়।
এর পর ১৯৯৪ সালে সেখানে চার কক্ষবিশিষ্ট ও ১৯৯৭ সালে দুই কক্ষবিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরু থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অনেক এগিয়ে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকত বেশ ভালো।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির চার কক্ষবিশিষ্ট ভবনটিতে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। অপর ভবনটির একটি কক্ষে অফিসরুম, অন্যটিতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বাকি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের স্কুলের মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। এতে করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারছেন না। মাটিতে বসার কারণে পরনের জামা-কাপড়ে ধুলোবালি লেগে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসতে চায় না শিক্ষার্থীরা। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসাই ছেড়ে দিয়েছে। আবার অনেক অভিভাবক ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় তাঁদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বেঞ্চ থেকেও যেন নেই। অনেক বেঞ্চের কাঠ ভেঙে গেছে। অনেক বেঞ্চ ফেটে গেছে। এর পরও যে কয়েকটি বেঞ্চ রয়েছে, সেগুলো ওই পরিত্যক্ত রুমেই রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ওই পরিত্যক্ত ভবনের ঘরে যায় না। তাই ঘর থেকে বেঞ্চগুলো বের না করেই বাইরে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসেই ক্লাস করছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের দিকে বিদ্যালয়টির চার কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ও সে সময়ের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সোলাইমান আলী পরিদর্শন শেষে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এর পর থেকে ভবনটি আর ব্যবহার করা হয় না। তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ের বাইরে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয়টির প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী মোসা. ফাহাদীর বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘স্কুলে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে শিশুদের লেখাপড়া করায় এবং ফাটল ধরা ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, তাই আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাই না।’
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের চার কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি প্রশাসন পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত নতুন ভবন পাওয়ার কোনো আশ্বাস তিনি পাচ্ছেন না। তাই শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করাতে হয়। এ ব্যাপারে তিনি বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুফল পাননি বলেও জানান।
এ মুহূর্তে ভবন না পেলেও অন্তত শিক্ষার্থীদের বসা ও পড়াশোনা করার জন্য টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন আরো জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনজন শিক্ষক আছেন। যেখানে প্রাথমিকের জন্য চারজন সাধারণ শিক্ষক এবং প্রাক-প্রাথমিকের জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে আছেন মাত্র তিনজন সাধারণ শিক্ষক। তাই তিনি অতিসত্বর প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগেরও দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পোরশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম ওলিউল ইসলাম বড়রনাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়গুলো অবগত আছেন স্বীকার করে বলেন, ‘কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমি বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে তালিকা প্রেরণ ও আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। তবে এখনো আমি নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’