ওয়ান ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ডের এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায় ওয়ান ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জালিয়াতির মাধ্যমে আনন্দ শিপয়ার্ডের ওই বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কর্মকর্তা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে ওয়ান ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে কমিশনের দল। সকাল ১০টা থেকে তাঁদের তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তারা হলেন মতিঝিল শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজতবা এম কাজমী, প্রিন্সিপাল অফিসার খালেদ আল ফাসানি, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আসিফ মাহমুদ খান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হাসান, প্রিন্সিপাল অফিসার এম আনিসুজ্জামান ও কর্মকর্তা আবু শাহদাত এম শহিদ।
ইউএনবি জানায়, গত সোমবারও ওয়ান ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা হলেন ওয়ান ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জহুরা বিবি, ভাইস প্রেসিডেন্ট এম আবু সালেহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজিনা আলেয়া আহমেদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আলতাফ উদ্দিন খান ও প্রিন্সিপাল অফিসার জামিল হোসেন।
দেশের জাহাজ নির্মাণ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা তুলে আত্মসাত করেছে- এমন অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের এপ্রিলে দুদকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আনন্দ শিপইয়ার্ড বিভিন্ন জাল তথ্যের ভিত্তিতে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
জাহাজ নির্মাণের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া আনন্দ শিপইয়ার্ডকে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে এসব জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসে। দুদকের উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী এ অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করেন।
ইউএনবি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ইসলামী ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ, এবি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ১৮৭ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ২২১ কোটি ২০ লাখ, ওয়ান ব্যাংক থেকে ১১৪ কোটি ২১ লাখ, জনতা ব্যাংক থেকে ২৩৪ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি ও এনসিসি ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নেয়।
এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) থেকে এক কোটি ৯৩ লাখ, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড থেকে ২৩ কোটি ১৮ লাখ, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড থেকে ১১ কোটি ৭৫ লাখ, আইডিএলসি থেকে তিন কোটি ৭২ লাখ, হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে দুই কোটি ৯২ লাখ, হজ ফাইন্যান্স থেকে তিন কোটি ৯২ লাখ ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে তিন কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে আনন্দ শিপইয়ার্ড।
এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আনন্দ শিপইয়ার্ড, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছিল বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়।