চেম্বার সদস্যদের বিপুল টাকা নিয়ে কর্মকর্তার আত্মগোপন!

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফিসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে সিনিয়র মেম্বারশিপ কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন মিঠু আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চেম্বারের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইমরান হোসেন মিঠুকে প্রথমে ভবনের দারোয়ান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সভাপতির অনুগত হওয়ায় তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এর আগেও মিঠু অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে দুই দফা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক জানান, চলতি বছরের জুলাই থেকে নতুন সদস্য ও পুরাতন সদস্য নবায়ন শুরু হয়। এর কিছুদিন পর বিভিন্ন সদস্য তাঁদের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা চেম্বারের সহসভাপতি গোপীকৃষ্ণ মুদ্রার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির তদন্তে সিনিয়র মেম্বারশিপ কর্মকর্তা ইমরান হোসেন মিঠুর প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এর পর মিঠুকে সায়য়িক বরখাস্ত করা হলে তিনি আত্মগোপন করেন। এ কারণে চেম্বারের বিধি অনুযায়ী মিঠুকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চেম্বার সভাপতি আরো জানান, চেম্বারের সদস্য নবায়নের শেষ তারিখ ৩১ আগস্ট। এর পরই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় চেম্বারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। টাকার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে মামলা করতে দেরি হচ্ছে। তিনি জানান, মিঠুর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হবে।
মিঠু কীভাবে চেম্বারের সিনিয়র মেম্বারশিপ কর্মকর্তা হলো—জানতে চাইলে খুলনা চেম্বারের সচিব নূর রোকসনা বানু বলেন, সভাপতির অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।
গতকাল সোমবার দুপুরে এ প্রতিবেদক চেম্বারে গিয়ে দেখেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় খুলনা চেম্বারের এক সদস্য মানি রিসিট (টাকার রসিদ) যুক্ত করে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে চান সচিবের কাছে। সচিব তখন অভিযোগটি সভাপতির অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না বলে জানান সদস্যকে। তবে ওই চেম্বার সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে তাঁর অভিযোগটি জমা নেওয়া হয়।
উল্লিখিত বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সহসভাপতিদের অভিযোগ, বর্তমান সভাপতি কাজী আমিনুল হক পাঁচ বছর আগে ব্যবসায়ীদের নিয়ে চেম্বার দুর্নীতিমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। যারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ আদায়ের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সভাপতি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রতি ভুলে গেছেন। সব দুর্নীতিবাজ পরিচালকের সঙ্গে তিনি সখ্য গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে চেম্বারে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
খুলনা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সাহরুজ্জামান মোর্তজা বলেন, ইমরান হোসেন মিঠু তাঁর মেয়াদে দারোয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমান সভাপতির অনুগত হওয়ায় যোগ্যতা না থাকলেও সিনিয়র মেম্বারশিপ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
মোর্তজা আরো বলেন, চেম্বার কার্যালয়ে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেখানে টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটল। কিন্তু কেউই জানল না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
চেম্বারের সাবেক সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম ও সহসভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বাদশা আক্ষেপ করে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলন করে বর্তমান সভাপতি কাজী আমিনুল হককে সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আগের দুর্নীতিবাজ পরিচালকরাই সভাপতির ঘনিষ্ঠ।
তিন বছর মেয়াদের জন্য খুলনা চেম্বারের সভাপতি হিসেবে পরপর দুবার নির্বাচিত হন কাজী আমিনুল হক। তাঁর মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।