ভাত চায় না, বাঁধ চায়

যমুনা নদীর ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে জনপদ, প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এই ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাঁদের দাবি, ভাত নয়, সরকারের কাছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ চান তাঁরা। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, নদীশাসনের জন্য সরকারের অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
গতকাল মঙ্গলবার যমুনা-তীরবর্তী সদর উপজেলার শিমলা গ্রামের পাশের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন তাঁদের বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন। সেখানকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, একসময় তিনি ৫০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে সব হারিয়েছেন। শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘর বেঁধেছিলেন শিমলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে। গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে সেটিও বিলীন হওয়ার পথে। এখন ঠাঁই নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপরের অংশে ছোট্ট একটি ঘরে।
হাবিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই অবস্থায় যদি ভাঙন থাকে তাহলে দুদিন পরে আমার এই ছাপড়াও থাকবে না, নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ভাত চাই না, বাঁধ চাই এবং নদীর কাজ চাই।’
urgentPhoto
হাবিবুর রহমানের মতো অবস্থা শিমলা, বাহুকা, ইটালি আর বালি ঘুগরী গ্রামের অনেকেরই।
ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা বলেন, ‘ওখন আর কোনুই যান। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি থেইক্যা আল্লায় যেখানে নেয়, ওখানে যানু। এ ছাড়া তো বুদ্ধি নাই।’
আরেকজন বলেন, ‘এইবার শুনতাছি কাম করব, কাম করব। কামের কোনো খবর নাই।’
২০১০-১১ অর্থবছরে এই এলাকার নদী ভাঙনরোধে নয়জন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয় পাউবো। এর মধ্যে একজন কাজ শেষ করলেও বাকি আটজনই নির্ধারিত সময়ে তা করতে পারেনি। এই অবস্থায় ছয় ঠিকাদারকে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা এবং তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে পাউবো।
তবে, নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ শেষ না করেই আবারও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরিকল্পনা শুরু করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, গত বছর তাদের জমিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করলেও এখনো সে পাওনা পরিশোধ করেনি পাউবো। এলাকাবাসী অভিযোগ করে, একই মৌজায় তিন-চারটা করে বাঁধ হচ্ছে। তাহলে গ্রামের লোক কী খেয়ে বাঁচবে।
আর ভাঙনের কথা স্বীকার করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, পুরানো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের টাকা জুনের মধ্যে পরিশোধসহ বরাদ্দ পেলেই ঠিকাদারকে কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি জানান, ‘ড্রেজিং করে চ্যানেল খনন করা, রিটায়ার্ড বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীর সংরক্ষণ এই তিনটি কাজই করা হবে। সরকারের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছি। আমরা শিগগির কাজ শুরু করতে পারব।’
ভাঙনকবলিত মানুষের এখন একটাই দাবি, বাঁধ চাই। ভাঙনের হাত থেকে বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা চান তাঁরা।