আ.লীগনেতা টিপু হত্যায় কাউন্সিলর মারুফের জামিন

রজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও শিক্ষার্থী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের জামিন দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এই আদেশ দেন। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিচারক আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তাকে (মারুফ আহমেদ) অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন আদালত।’
পিপি আরও বলেন, ‘গত ১৬ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মারুফ আহমেদ মনসুর। ওই দিন তার আবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সে আদেশের পরে তিনি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ৫ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। প্রতিবেদনে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এরপরে ২০ জুন এ মামলায় বিদেশে পলাতক জিসান ও ফ্রিডম মানিকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। অভিযোগপত্র গ্রহণের পরে এ মামলায় পলাতক থাকায় আশরাফ তালুকদারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন–ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, জিসান আহম্মেদ মন্টু, ফ্রিডম মানিক ওরফে জাফর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, রিফাত হোসেন, সোহেল রানা, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, সামসুল হায়দার উচ্ছল ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল। এর মধ্যে কাউন্সিলর মনসুর আত্মসমর্পণ করেন। অপরদিকে কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন–মশিউর রহমান ইকরাম, ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে সোহেল এবং তৌফিক হাসান ওরফে বিডি বাবু। তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন–ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা। এদের মধ্যে ২৪ জনই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর মুসা, আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এজাহার থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টায় রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগনেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরিন প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। সে সময় টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।