ফাঁসির রায়ের জেরে বিচারককেই ফাঁসির হুমকি
জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র মোয়াজ্জেম হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জের ধরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীনের ভাড়া বাসার গ্রিল কেটে চুরি ও তাঁকে হত্যার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেছেন বিচারক আব্বাস উদ্দীন।
এ খবর জানতে পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাউজিং এস্টেট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন অতিরিক্ত দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীন। গতকাল সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে প্রবেশ করে অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি। এরপর তারা বিচারকের ঘরের লক খোলার চেষ্টা করলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতিবেশী পুলিশ কনস্টেবল আরিফুলকে ফোন দেন ও চিৎকার শুরু করেন বিচারক দম্পতি। এরই মধ্যে তারা তার শয়ন কক্ষে ঢুকে বিচারক আব্বাস উদ্দীনকে গত ৩১ জানুয়ারি ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ায় ছোড়া দেখিয়ে বিচারককেও ফাঁসি দিবে বলে হুমকি দেয়। ওই সময় পুলিশ কনস্টেবল আরিফুল এসে চিৎকার দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় একটি ব্রিফকেসে রাখা পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ সময় কনস্টেবল আরিফুল একজনকে জাপটে ধরলে সে নিজেকে ছুটিয়ে নিলে আরিফুল রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত পান।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি স্কুলছাত্র মোয়াজ্জেম হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জের ধরে পলাতক আসামিরা অথবা তাদের লোকজন দিয়ে বিচারককে হত্যার উদ্দেশে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১১ আসামির মধ্যে ছয়জনই পলাতক।
এ ঘটনায় আজ দুপুরে ওই আদালতের সেরেস্তা সহকারী আফরোজা সুলতানা মিলির মাধ্যমে থানায় মামলার লিখিত কপি পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
এদিকে আজ বিকেলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানালার গ্রিলের কাটা অংশ মেরামত করা দেখতে পান।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, গতকাল রাতে বিচারক আব্বাস উদ্দীনের বাড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই খবরটি আমি আজ বিকেলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় বিচারক থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, ‘এ ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে আজ বিকেলে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যাপারটা রহস্যজনক ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। রহস্য উদঘাটন করার জন্য আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় ওই বিচারকের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সন্ধ্যায় থানায় মামলা হয়েছে। '