কাশিমপুর ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত ১৭৮ বিডিআর সদস্য
গাজীপুরের কাশিমপুরের তিনটি কারাগার থেকে ১৩৫ এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩ বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চার ধাপে এসব বিডিয়ার সদস্য মুক্তি পান।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এ কে এম মাসুম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর সদস্য বন্দি রয়েছেন মোট ১২৮ জন। জামিনে মুক্ত হয়েছেন ১৩ জন।
দীর্ঘ ১৬ বছর কারারুদ্ধ থাকার পর মুক্তি পেয়েই জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সম্মান, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনার বিচারসহ চাকরিতে তাঁদের পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বিস্ফোরক আইনের মামলায় দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকার পর জেলখানার বাইরে এসেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা। সকাল থেকেই তাদের স্বজনরা কারা ফটকে ফুলসহ নানা মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘদিন পর স্ত্রী সন্তানদের কাছে পেয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকেই সন্তান ছোট রেখে কারাগারে গেছেন, এখন সেই সন্তানের বিয়ে হয়েছে, তারাও স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবাকে বরণ করতে এসেছেন। এ অনুভূতি কেউ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না।
এ সময় মুক্ত বিডিআর সদস্যরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁদের দীর্ঘ দিন কারারুদ্ধ করে জীবনের মূল্যবান সময় ধ্বংস করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা বলে দাবি করেন। বর্তমানে তাঁরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন, কী করবেন—সেই ভাবনায় আছেন। তাই বর্তমান সরকার যাতে তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল অথবা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন সেই দাবি জানান।
কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে বিডিয়া সদস্য আব্দুস সালাম জানান, তৎকালীন সরকারের শিখিয়ে দেওয়া কথা অনুযায়ী সাক্ষী না দেওয়ায় তাঁকে নির্মম নির্যাতন চালায়। এমনকি তার পায়ে ছুড়িকাঘাত পর্যন্ত করা হয়েছে। এমনই নির্যাতনের কথা স্বীকার করেন মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা।
কাশিমপুর কারাগার-১ মোট বিডিআর সদস্য বন্দি ৮৪ জনের মধ্যে মুক্ত হয়েছেন ২৫ জন এবং কারাগার-২ এ মোট বিডিআর সদস্য বন্দি ৩৭৮ জন। তাদের মধ্যে মুক্ত হয়েছেন ৮৯ জন।
আরও ১০ বিডিআর সদস্যের জামিননামা কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে বিকেলে আরও আটজন মুক্তি পান। এ নিয়ে কাশিপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান মোট ১৩৫ জন।
মোট ৫৯০ বিডিআর সদস্য কাশিমপুর কারাগারে বন্দি। তাদের মধ্যে আজ মুক্তি পেলেন ১৩৫ জন।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারে ৫৯০ বিডিয়ার সদস্য বন্দি ছিলেন, তাদের মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছে ১২৭ জন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন ১৩ জন। সকাল সাড়ে ১১টায় কারাগার-১ থেকে জামিনে মুক্ত হন ২৫ জন।
দুপুর দেড়টায় কারাগার-২ থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন ৮৯ জন।
তাদের মুক্তির যাবতীয় কাগজপত্র কারাগারে আসার পর যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিয়ার সদস্যরা কারাগারের ফটক দিয়ে বের হয়ে স্বজনদের সঙ্গে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশে চলে যান। সকাল থেকেই কারা ফটকে করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারামুক্ত হওয়ার আনন্দে আত্মহারা পরিবারের সদস্যরাও।
জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য কে এম সুজাউজ জামান জানান,অনেক বছর পর পরিবার কে কাছে পেয়ে আমি আনন্দিত। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়ায় আমাকে আসামি করে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। আমার একমাত্র ছেলের সাত বছর বয়সে আমাকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। আজ আমার ছেলে তার সন্তানকে নিয়ে আমাকে জেল থেকে নিতে এসেছে। আমার জীবন থেকে মূল্যবান যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে তার বিচার দাবি করছি।
গত ২০ জানুয়ারি রোববার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয়নি এমন দুই শতাধিক আসামি। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের এই জামিন দেন।
অপর দিকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৪৩ বিডিআর সদস্য। এ খবর নিশ্চিত করেছেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এ কে এম মাসুম।
আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামিনের সব কাগজপত্র পরীক্ষা করে কারাগার থেকে এসব বিডিআর সদস্যকে মুক্তি দেওয়া হয়।