স্বৈরাচার পালালেও গণতন্ত্র এখনও শঙ্কামুক্ত নয় : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার পালালেও গণতন্ত্র এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র কিন্তু অব্যাহত রয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা নানা কৌশলে পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত লিপ্ত।
আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান অধ্যাপক প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ এবং সরকার যতক্ষণ না গঠিত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়। গত দেড় দশকে বিতাড়িত স্বৈরাচারের সময়ে দেশের সংখ্যালঘু কেন্দ্রিক প্রত্যেকটি ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে, অধিকাংশ ঘটনার নেপথ্যে ছিল অবৈধ লোভ-লাভের জন্য দুর্বলের ওপরে সবলের হামলা, কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় পরিচয়কে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ নিজেদের হীনস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতি বিনীত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর সনাতনীদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সত্যিকার অর্থেই এই গভীর সত্যটি যদি সনাতন ধর্মের অনুসারীগণ বুঝতে পেরে থাকেন, অবশ্যই এটি আপনাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্দি।
তারেক রহমান আরও বলেন, হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্রমতে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম তিথিতে জন্ম নিয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু ধর্মের অবতার শ্রীকৃষ্ণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মথুরায় এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেন যখন মথুরার ক্ষমতায় ছিল অত্যাচারী নিষ্ঠুর শাসক কংস। গত একদশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কংসের মত নৃশংস স্বৈরাচারি শাসক জনগণের ওপর জগদ্বল পাথরের মতন চেপে বসেছিল। দল মত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালায় সেই কংসরূপী নৃশংস গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এটি কোনও একটি দেশের জনসংখ্যার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য কেবলমাত্র একটি শব্দ, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এই বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি, এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সকল ক্ষেত্রে সমঅধিকার ভোগ করবে। এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, দল-মত, ধর্ম-দর্শন যার যার, রাষ্ট্র কিন্তু সবার। ধর্ম যার যার নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। সুতরাং এই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের সবার সামনে আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি বিরাট সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার জন্য বিএনপি আপনাদের সমর্থন ও সহযোগীতা চায়।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন শেখ হাসিনা পলায়নের পরে দেশের মধ্যে চরম বিভক্তি, অস্থিরতা, আনন্দ একসাথে বিরাজ করছিল, সহনশীলতার প্রশ্ন আসছিল। তখন তারেক রহমান সাহেবের একটি বক্তব্য আপনারা কতজন শুনেছেন আমি জানি না। উনি বলেছেন যুদ্ধে যারা জয়ী হয় সেই জয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে যাবে যদি পরাজিতদের নিরাপত্তা দেওয়া না যায়, সুতরাং যুদ্ধ শেষে যদি আপনি পরাজিতের নিরাপত্তা দিতে না পারেন সেটা ম্লান হয়ে যায়। সেই জাতি কোনও দিন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। বিএনপির রাজনীতির যে ভাবনা ও দর্শন, যে আকাঙ্ক্ষা তার একটুখানি আমি তুলে ধরলাম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে এমন একটি বিভক্তির রাজনীতি হয়েছে, ধর্ম ও জাতিগত বিভক্তি, রাজনৈতিক বিভক্তির মাধ্যমে কোনও দল ও ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই বিভক্তির মধ্যে পড়েছিল দেশ। বাংলাদেশের মানুষের সেখান থেকে বেরিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের আজকের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, শ্রী উমেষানন্দ গিরি মহারাজ, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইস্রাফিল মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।