স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও অরক্ষিত সাটুরিয়ার গণকবর

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে, তবে এখনও অরক্ষিত ও অবহেলায় পড়ে আছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গণকবর। গণকবরটির একপাশে ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড। প্রতিবছর ২৬শ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর এলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এরপর সারা বছর আর কোনো খোঁজ-খবর রাখে না কেউ। ৫৪ বছর পার হলেও এখানে এখনও নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) দুপুরের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়—গণকবরের পাশে দুটি খুঁটির সঙ্গে একটি সাইনবোর্ড টানানো আছে। যাতে লেখা রয়েছে সাটুরিয়া বধ্যভূমি বা গণকবর। অথচ গণকবরের উত্তর পাশের জায়গা আটকে বসত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একটি বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি ছিল পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে এই বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। এ ছাড়াও স্বাধীনতার পর ক্যাম্পের পেছন থেকে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছিল। এই বধ্যভূমিতে সুধীর রায়, কালু রায়, বিজয় রায়, মৃগাল রাণী রায়, কালু মিয়া, আভারাণী, ডা. নরেন্দ্র কুমার ঘোষ, হালিম ফকিরসহ প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে গণকবর দেওয়া হয়েছিল।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭৩ শতাংশ জমির ওপর সাটুরিয়ার গণকবরটি সংরক্ষণ করার জন্য দুইবার বাজেট আসে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে টাকাগুলো দুই বারই ফেরত চলে যায়। সারাদেশে গণকবর বা বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার নির্দেশনা থাকলেও সাটুরিয়ার গণকবরটি চিহ্নিত করার পরও তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তারা।
সাটুরিয়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ.খ.ম নূরুল হক বলেন, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের এই স্মৃতিটুকু আমরা রক্ষা করতে পারছি না। এটা আমাদের জন্য অতি কষ্টের বিষয়।
নূরুল হক আরও বলেন, দখলকারীরা ঘরবাড়ি বানিয়ে গণকবরের বেশিরভাগ জায়গা বছরের পর বছর ধরে ভোগ করছে। গণকবরের যেটুকু জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হোসেন বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের এই গণকবর সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাতে করে ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষিত থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে।