বিরোধে কৃষকের ঘরে আগুন, খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন

জামালপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লাগানো আগুনে কৃষক রফিকুল ইসলামের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে সবকিছু হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে মাদারগঞ্জের গুনারীতলা ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা বেগম মাদারগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, গুনারীতলা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত জয়েন উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল একই এলাকার মৃত এফাজ উদ্দিনের ছেলে সামিউল ইসলাম (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৫৫), শফিকুলের ছেলে সিহাব (২১) ও স্ত্রী শিউলি আক্তারের। এর আগেও বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল প্রতিপক্ষরা।
বুধবার দুপুরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সামিউলের নির্দেশে শফিকুল ইসলাম প্রথমে গোয়ালঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নেভাতে গেলে মিনারা বেগমকে টেনে-হিঁচড়ে মারধর করা হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বসতঘরসহ আশপাশের সব স্থানে।
দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে যায় ঘরের আসবাবপত্র, ধান-চাল, নগদ টাকা, জমির দলিল, সন্তানের শিক্ষাগত সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবারটি।
ভুক্তভোগী মিনারা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্টে ঘর করেছিলাম। কিন্তু সেই ঘরও টিকল না। চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছি।’
মিনারার জা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি আগুন নেভাতে গেলে আমাকেও বেধড়ক মারধর করে। আমাদের চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। এখন কোথায় যাব, কী করবো বুঝতে পারছি না।’
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জমি নিয়ে আমাদের মধ্যে আগেও দ্বন্দ্ব ছিল। বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছে। এবার সেই হুমকি বাস্তব করল। ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। খাওয়ার মতো কিছু নেই। জমির দলিল, ছেলের সার্টিফিকেট কিছুই আর বাকি নেই। মামলা করেছি, কিন্তু তাতেও শান্তি নেই। জামিনে বেরিয়ে আবারও হুমকি দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে বাড়িতে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। একাধিকবার ফোন করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর মামলা হয়েছে। একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। জামিনে বের হয়ে হুমকি দিলে থানায় জিডি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বর্তমানে পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।