‘দুই গুণ বেশি ভাড়া দিমু ক্যা, ট্রাকে যাব’

রাত সাড়ে ১১টা, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ)। কারওয়ান বাজার। এক শিশুসহ চারজন দাঁড়িয়ে আছে। ফুটপাতের রেলিংয়ের পাশে তাদের ব্যাগ রাখা। সবার গন্তব্য বগুড়া। এদের মধ্যে বাদশা ও রশিদ নামের দুজন অটোরিকশা চালান। মোহাম্মদ মিন্টু পদ্মা নদীতে মাছ ধরেন। আর শিশু তৌহিদ মাদরাসায় পড়ে।
কথার ছলে বাদশা মিয়া মিন্টুর উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘বগুড়ার অরজিনাল ভাড়া ৫৫০ টাকা। আজ ১২শ টাকা চাইল ক্যা? অতো টাকা দেব ক্যা? সেই জন্যি চলি এলাম এখানে (কারওয়ান বাজার)। পত্রিকার গাড়িতে না হলে ট্রাকে চলে যাব। সাড়ে চার ঘণ্টার আগেই বাড়ি চলি যাব।’
তারা যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন এ প্রতিবেদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় বাদশা মিয়া ক্ষুব্ধ। পাশে থাকা অন্য দুজনও ক্ষুদ্ধ। তারা জানান, তাদের আয় কম। দ্বিগুণেরও বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের জন্য বাড়ি যাওয়া কঠিন। সেজন্য তারা ট্রাকে করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে বাদশা মিয়া বলেন, ‘বাসা থেকে যখন বের হইছি, চিন্তা করছি বাসে যাব। উত্তরবঙ্গের বাস কাউন্টারগুলোতে গেলাম। ভাড়া চায় ১২শ টাকা। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, তৌহিদকে নিয়ে এখানে চলে আসছি। একেকজন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পত্রিকার গাড়িতে, না হলে তরকারির ট্রাকে চলে যাব। দুই গুণ বেশি ভাড়া দিমু ক্যা, ট্রাকে যাব।’
মিন্টু আর রশিদের বাড়িও বগুড়ায়। তারা দুজনও বাদশা মিয়ার মতো একই মনোভাব পোষণ করেন। মিন্টু বলেন, ‘যত দেরিই হোক, বাসায় গিয়ে সেহেরি খাব। ফাও অতো বেশি টাকা দিতে যামু ক্যা?’
রাত পৌনে ১১টা। আরও কয়েকজন এসে উপস্থিত হলেন একই জায়গায়। তাদের এক যুবকের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি একটি দোকানে কাজ করেন। যাবেন যশোর। বাস কাউন্টারে গিয়েছিলেন। কিন্তু, টিকিট পাননি তিনি। রফিকুল বলছিলেন, গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো আজ (২৭ মার্চ) রাতে। কাউন্টারে গেলাম। টিকিট পেলাম না। আবার ভাড়াও বেশি। তাই ট্রাকে যাব বলে এখানে এলাম। গত ঈদেও আমি ট্রাকে বাড়ি গিয়েছিলাম।’

রাত সোয়া ১১টা। এবার দেখা গেল বেশ কয়েকজন তাদের ব্যাগ রাখলেন মেট্রো স্টেশনের নিচের সড়কের একপাশে। তারা সবাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাবেন। সেখানে এক পরিবারের দুজন নারীও ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘টিকিট পাইনি, তাই সবাই মিলে ট্রাকে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মধ্যে থেকে একজন কারওয়ান বাজারের ভেতরে গিয়েছেন। তিনি ট্রাক ঠিক করবেন। আমরা এখান থেকে উঠে যাব।’
ফয়সাল সবুজ নামের এক বলেন, ‘আমি রাজশাহী যাব। বাসে টিকিট পাইনি। আবার ভাড়াও বেশি। সেজন্য শেষমেশ ট্রাকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখানে এলাম। আমার এক বন্ধু এভাবে গত ঈদে গিয়েছিল। তার কাছ থেকে শুনে এবার আমি এলাম। আশা করি, ভালো লাগবে।’