পাবনায় লিচুর ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়!

‘লিচুর রাজধানী’ খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী ও সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে লিচুর ফলনে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লিচু চাষি, বাগান মালিক ও জনপ্রতিনিধিরা এর কারণ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দায়ী করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা এ দাবি নাকচ করে বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন কম হয়েছে।
আজ শনিবার (৩ মে) কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এ বছর পাবনায় চার হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া, মাধাপুর, নাজিরপুর ও ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, সিলিমপুর, সাহাপুর, রূপপুর, বক্তারপুর, জয়নগর, চররূপপুর, তিনগাছা, বাঁশেরবাদা ও আটঘরিয়া ও চাটমোহর এলাকায় লিচুর বাগানগুলোতে মুকুল এবং গুটির বদলে নতুন পাতায় ছেয়ে গেছে গাছ। চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ১০ ভাগের এক ভাগও মুকুল আসেনি।
পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, ৯৬ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেছেন। গত বছর মুকুলের সময় তার বাগান ৭৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার মুকুল না থাকায় এখনও বাগান বিক্রি হয়নি।
ঈশ্বরদীর বাশেরবাদা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ৬০ বছরের জীবনে এত কম লিচু দেখিনি। আওতাপাড়া গ্রামের চাষি টুটুল হোসেন বলেন, পাবনা শহর থেকে রূপপুর যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের বাগানগুলোতে পাবনার অংশে কিছু মুকুল দেখা গেলেও রূপপুরের দিকে শুধু নতুন পাতা।
ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাবু মিয়া রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের কারণেই এই ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বলে দাবি করেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ি পাবনার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তাই ফলন অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এর জন্য দায়ী নয়।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামও বৈরী আবহাওয়া, পরাগায়নে জটিলতা ও বৈশ্বিক জলবায়ুর কারণে লিচুর মুকুল ও গুটি কম হওয়ার কথা জানান। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।