সাড়ে ১৬ বছর পর নিজ দেশে ফিরছেন ডা. জুবাইদা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রমহানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান স্বামীর সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও আর দেশে ফেরা হয়নি তার।
স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমাকে নিয়ে ১৬ বছর সাত মাস ধরে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে বসবাস করছেন ডা. জুবাইদা রহমান। এবার তার দেশে ফেরার অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী সোমবার (৫ মে) নিজ জেলা সিলেটে পা রাখতে যাচ্ছেন তিনি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার (৪ মে) শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়াসহ বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন ডা. জুবাইদা। পরদিন সোমবার সকাল ৯টায় প্রথমে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। এরপর একই ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় আসবেন।
ডা. জুবাইদা রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ জুন সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও মন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। বিসিএস (চিকিৎসক) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে জুবাইদা রহমানের বিয়ে হয়।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান ডা. জুবাইদা। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়।
ওই অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। টানা ১৭ দিন চিকিৎসার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই আগামী সোমবার শাশুড়ি-বউ একসঙ্গে দেশে ফিরবেন।
এদিকে, ডা. জুবাইদা রহমানের জন্য চার ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের সই করা চিঠি দেওয়া হলেও বিষয়টি জানা গেছে শুক্রবার (২ মে)।
চিঠিতে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন। ডা. জুবাইদা রহমান তার সফরসঙ্গী হিসেবে দেশে আসবেন এবং ধানমণ্ডিতে তার বাবার বাসায় অবস্থান করবেন।
এতে আরও বলা হয়, জিয়া পরিবারের সদস্য এবং তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সেই কারণে তার ঢাকার বাসায় অবস্থানকালীন ও যাতায়াতের সময় একজন সশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা এবং বাসায় আর্চওয়ে স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।