রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শিকলবন্দী ২৫ বছর, অর্থাভাবে মিলছে না চিকিৎসা

একটু ছাড়া পেলেই ভাঙতেন মানুষের ঘর-বাড়ি। যাকে সামনে পেতেন তাকেই মারধর করতেন। প্রতিনিয়ত আসতো প্রতিবেশিদের অভিযোগ। অভিযোগের পাল্লা যখন ভারী হয়ে ওঠে তখন মানসিক ভারসাম্যহীন বিমল হালদারকে (৫০) তার পরিবারের লোকজন শিকলবন্দী করে রাখেন। এই অবস্থায় কেটে যায় ২৫ বছর। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দিন কাটে বিমল হালদারের। এমনকি প্রচন্ড শীতের মধ্যেও তাকে ফাঁকা জায়গায় গাছের নিচে একাকি রাতযাপন করতে হয়।
বিমল হালদার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের চন্দ্রকান্ত হালদারের ছেলে। ছাত্রজীবনে বিমল হালদার ছিলেন খুবই মেধাবী। উপজেলার সিকিরবাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে স্থানীয় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজে ভর্তি হন বিমল বিশ্বাস। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিমল হালদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকেন।
এরপর প্রতিবেশিদের পরামর্শে বিমল হালদারকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর কয়েক বছর ভালো থাকলেও আবার শুরু হয় অসংলগ্ন আচরণ। এরই মাঝে বিমল হালদারের ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় না।
শুরু হয় বিমল হালদারের চিকিৎসা। তাকে চিকিৎসা করাতে করাতে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যায়। এ অবস্থায় তার স্ত্রী সন্তান দুটিকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। স্ত্রী ও সন্তানেরা দূরে চলে যাওয়ায় বিমলের আচরণ আরও খারাপ হতে থাকে। শুরু করে আশপাশে মানুষদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর। যাকে সামনে পায় তাকেই মারধর করে। এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে পরিবারের লোকজন বিমল হালদারকে শিকলবন্দী করে রাখতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে বাড়ির পাশে খালপাড়ে একটি রেইন্ট্রি গাছের নিচে ইট দিয়ে ৫ ফুট চওড়া ও ৮ ফুট দৈর্ঘ একটি পাকা মাচা তৈরী করে তার ওপর শিকলবন্দী করে বিমল হালদারকে রাখা হয়েছে।
এখানেই বিমল হালদারকে খাবার দেওয়া হয়। এই জায়গাটুকুর উপরই বিমল হালদারের রাত দিন কাটে। দিন, মাস পেড়িয়ে কেটে গেছে ২৫ বছর। কিন্তু বিমল হালদারের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
বিমল হালদারের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, বিমল হালদারকে সুচিকিৎসা দিলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

বিমল হালদারের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সঞ্জিতা হালদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এইসএসসি পাস করার পর বিমল আমাদের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। এরপর তাকে বিয়ে দেই। বিয়ের পর সে কখনো ভালো, কখনো খারাপ অবস্থায় ছিল। এর মাঝে সে দুই সন্তানের বাবা হয়। সে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া ও মারধর করার কারণে তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপর বিমল পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়।
বিমলের বড় ভাই জগদীশ হালদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ভারত, পাবনা, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমলের চিকিৎসা করাতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ডাক্তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে পারিনি। ওকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করাতে পারলে মনে হয় ভালো হতো।
জগদীশ হালদার আরও বলেন, প্রথমে ওকে ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু সব কিছু ভেঙে ফেলে। এরপর খালপাড়ে একটি পাকা করে মাচা তৈরি করে তার উপর প্রায় ২৫ বছর শিকলবন্দি করে রেখেছি। এখানে কেউ একটি ছোট পাকা ঘর করে দিলে ও রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেত।