বস্তায় আদা চাষে অভাবনীয় সাফল্য

পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার চাষিরা। এর ফলে চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদা আবাদের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
অল্প খরচ ও কম শ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় গত বছরের তুলনায় কৃষকরা চলতি বছর ৩-৪ গুণ বেশি জমিতে আদা আবাদ করছেন। অন্যদিকে, তাদের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে নতুন কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হয়ে নিজেদের আবাদ শুরু করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দামি এই মসলা চাষে ভৈরবের কৃষকরা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলবেন, এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি বিভাগ জানায়, বস্তায় আদা চাষ করতে ১০-১২ কেজি মাটি, ৫ কেজি গোবর, ২ কেজি বার্মিকম্পোস্ট সার, ২০ গ্রাম টিএসপি, সাড়ে ৭ গ্রাম এমওপি, ১ কেজি ছাই, ১০ গ্রাম কারকাপ, ৫ গ্রাম দস্তা বা জিংক এবং ৫ গ্রাম বোরন মিশিয়ে একটি প্লাস্টিক বা চটের বস্তায় ভরতে হয়। এরপর বস্তায় ৪০-৫০ গ্রামের একটি আদা বীজ ৪-৫ ইঞ্চি গভীরে রোপণ করতে হয়। পরে বস্তাগুলি বাড়ির আশপাশে, ফলের বাগান, গাছের তলায়, সবজির মাচার নিচে, ঘরের ভিটির চারপাশে বা আঙিনায় রাখা হয়। এরপর কোনো অতিরিক্ত যত্ন বা শ্রমের প্রয়োজন হয় না।
কৃষকরা জানান, এই প্রক্রিয়াতে প্রতিবস্তা আদা চাষে তাদের খরচ পড়ে ৫০-৬০ টাকা। প্রতিবস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদিত হয়। দেড় কেজি আদার বাজার মূল্য ৩০০ টাকা। ফলে প্রতিবস্তায় খরচ বাদে তাদের মুনাফা হয় ২৫০-২৪০ টাকা।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামের চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি গত মৌসুমে ৭০ বস্তা আদা চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ১ হাজার বস্তা আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
একই এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, তিনি ১০০ বস্তা আদা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার ১ হাজার বস্তা আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

কালিকাপ্রসাদ এলাকার মনির মিয়া ও কাঞ্চন মিয়া জানান, আদা চাষের সমস্ত উপকরণ উপজেলা কৃষি বিভাগ তাদের দিয়েছেন, সাথে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তারা আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। কাঞ্চন মিয়া বলেন, সরকারি বা বেসরকারি চাকরির পেছনে না ঘুরে বেকার ছেলেরা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, গত মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্য পূরণ করে কৃষকরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন।
আদার ভালো ফলন ও বিক্রির ফলে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চলতি মৌসুমে প্রতিব্লকে ৫০০ করে মোট ১১ হাজার বস্তায় আদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, এর চেয়ে অনেক বেশি আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখানে বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।