ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৩৫ হাজার পশু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের পশুর বাজারগুলো জমজমাট হয়ে উঠে অন্তত ১৫ দিন আগে থেকেই। সেই অনুযায়ী এবারও কোরবানির পশু বিক্রি করতে শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। ইতোমধ্যে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রয়ের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে প্রতিবেশী দেশগুলো হতে গরু আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারিরা। জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যৌথভাবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাট ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদ পরিবহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত পশু নিশ্চিত করতে খামারিদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গবাদি পশুর খামার রয়েছে ১৪ হাজার ৭৯২টি। এসব খামারে কোরবানির জন্য এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৫ পশু লালনপালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খামার রয়েছে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১৭১টি, কসবায় ২ হাজার ৪৪টি, নবীনগরে ১ হাজার ৭০৩টি, নাসিরনগরে ১ হাজার ৬১৮টি, বাঞ্চারামপুরে ১ হাজার ২৮১টি, সরাইলে ১ হাজার ২৭৫টি, আশুগঞ্জে ১ হাজার ২৭টি ও বিজয়নগরে ৮৯৬টি। ৯ উপজেলার ১৪ হাজার ৭৯২টি খামারে গরু রয়েছে ৯৯ হাজার ৫৬৭টি, মহিষ ১২ হাজার ১৬৬টি, ছাগল ১৫ হাজার ৩২১টি ও ভেড়া ৮ হাজার ৫৮১টি।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার বিলকেন্দুয়াই গ্রামের নবাব এগ্রো ফার্মের খামারে ৭০-৮০টি বিভিন্ন জাতের দেশীয় ও বিদেশি গরু লালনপালন করা হচ্ছে। খামারটিতে নিয়মিত চারজন শ্রমিক গরুগুলোকে পরিচর্যা ও দেখাশোনা করছে।
এ খামারের মালিক আশরাফুল ইসলাম শাকিল জানান, ‘আমাদের খামারে অর্ধশতাধিক কোরবানির গরু রয়েছে। এখানে সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকার গরু রয়েছে। ফাইটার, খাসা, শাহিওয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ষাঁড়, বলদ ও মহিষ রয়েছে। খামারে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। যদি ভারত হতে গরু না আসে, তাহলে লাভবান হতে পারব।’
জেলার পৌর শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকার প্রিন্স এগ্রো ডেইরি খামার। এই খামারে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় ২০০টির মতো গরু রয়েছে। এই খামারে সর্বোচ্চ গরুর মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন দেড় লাখ। খামারটিতে আকর্ষণীয় বড় বড় গরু রয়েছে। প্রতিদিন আটজন শ্রমিক খামারটিতে কাজ করেন।
খামারটির মালিক ফুরকান উদ্দিন বলেন, ‘আমি ব্যাংক হতে লোন নিয়ে এখানে বিনিয়োগ করেছি। এখন আমাদের দিক বিবেচনা করে সরকারের একটা পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে করে ভারত থেকে গরু না আসে। তাহলে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হবে। ঈদের জন্য গরুগুলো প্রস্তুত করতে তিন বেলা খর, ঘাস, চিটা গুড়, খৈল, ভুষি দেওয়া হয়। ঈদের আগে যদি ভারত হতে গরু আসে, তাহলে অনেক টাকা লোকসান হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর কোরবানির ঈদ ঘিরে পর্যাপ্ত পশু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রস্তুত রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত আরও কয়েক হাজার পশু থাকবে। আমরা বিভিন্ন খামারে গিয়ে খামারিদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছি। খামারিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন পশু লালনপালনে।’
কোরবানিকে ঘিরে সরকারের কাছে জেলার সব খামারিদের একটাই দাবি, ভারত ও অন্যান্য দেশ হতে যেন কোনো কোরবানির পশু আমাদানি না করা হয়।