জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দ.কোরিয়া যাচ্ছে পটুয়াখালীর মুগ ডাল

জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশের মুগ ডাল। উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে উৎপাদিত মুগ ডাল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এসব দেশে রপ্তানি হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদন সহায়ক জমির উর্বরতা, ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় রবি মৌসুমে পটুয়াখালীর বেশিরভাগ জমিতেই মুগ ডাল চাষ করছেন কৃষকরা। ফলে প্রতি মৌসুমেই মুগ ডাল চাষ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তর পটুয়াখালী খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় উৎপাদনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ছয় জাতের মুগ ডাল চাষ করা হয়। এর মধ্যে বারী-৬ জাতের মুগ ডাল আকারে বড় হওয়ায়, এ ডাল অঙ্কুরোদগম (অঙ্কুরিত) করে খায় জাপানিরা।
কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে, এ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মুগ ডাল রপ্তানি হচ্ছে।
উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, জাপানের একটি কোম্পানি মুগ ডাল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ওদের তালিকাভুক্ত সাড়ে তিন হাজারের মতো কৃষক আছে, যাদের কাছ থেকেই মূলত ওরা মুগডাল সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, গত মৌসুমে খুলনা থেকে বেসরকারি একটি পার্টি এসে মুগ ডাল সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু রপ্তানি হয়েছে।
জানা যায়, মুগের আবাদ, পরিচর্যা আর ফলন ঘরে তুলতে কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের। চলতি মৌসুমের উৎপাদিত মুগ ডালের বাজার মূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মুগ ডাল উৎপাদন হচ্ছে পটুয়াখালীতে। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে মুগ ডাল।
পটুয়াখালী কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসেবে চলতি রবি মৌসুমে পটুয়াখালী জেলায় ৮৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তবে চাষ হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায়ই আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে। বিগত মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ১ হাজার কেজি মুগ ডাল পাওয়া গেলেও, এ বছর হেক্টরপ্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ১৫০ কেজি।
চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ২৩৪ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন। ১০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমূল্য ৯৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া এখনও মাঠে রয়েছে ৪ শতাংশ ডাল।
কৃষকরা জানান, জমিতে কোনো রকম দুটি চাষ দিয়ে অল্প খরচ আর কম পরিশ্রমে দুই থেকে আড়াই মাসে মুগ ডালের ফলন ঘরে তোলা যায়। কৃষকদের খরচ হয় হেক্টর প্রতি ৫০ হাজার টাকা। বাজারে মুগ ডালের ভালো দাম আর চাহিদা থাকায় কৃষকরা এ ডাল আবাদে দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছেন।
বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া এলাকার কৃষক মো. শাহ আলম বলেন, ‘এ বছর দুই একর জমিতে মুগ ডাল আবাদ করেছি। একরপ্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে।’
দশমিনা উপজেলার কৃষক মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য রবি ফসলের তেমন ভালো দাম পাওয়া যায় না। তাই নামমাত্র চাষ ও কম শ্রমে কোনো রকম পরিচর্যা করেই এই ডাল চাষ করা যায়। তাই দিন দিন মুগ ডাল চাষে আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে পড়ছে এলাকার কৃষকরা।’